যশোর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

, আইন-আদালত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর | 2023-09-01 08:46:49

 

যশোর মাদক নিরাময় কেন্দ্রে মাহফুজুর রহামান (২০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর আগে ওই যুবককে মারধরের একটি সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে পুলিশ।

অভিযোগ উঠেছে শনিবার (২১ মে) ওই যুবকের মৃত্যুর পর তার মরদেহ প্রতিষ্ঠানটির সদস্যরা যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেখে চলে যায়। এরপর পরিবারের লোকজন জীবননগর থেকে এসে রোববার (২৩ মে) দুপুরে হত্যার অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। নিহত মাহফুজুর রহমান চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকার মনিরুজ্জামানের ছেলে।

নিহতের চাচা সাইদুর রহমান বলেন, আামর ভাতিজা মাহফুজ মাদকসেবী। তাকে গত ২৬ এপ্রিল যশোরে মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। শনিবার বিকেলে খবর পাই তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন মারধর করে হত্যা করেছে। পরে মরদেহ অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে চলে যায়। আমরা পরিবারের লোকজন এসে মরদেহ হাসপাতাল মর্গে পাই।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার জানার পর পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয় এবং সিসিটিভি ফুটেজও তা পাওয়া যায়। এরপর রাতেই পুলিশের পৃথক কয়েকটি টিম অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেন্দ্রের পরিচালক শহরের বারান্দীপাড়া বটতলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে আশরাফুল কবির (৪২), শহরের মিশনপাড়া (ডিসির বাংলো) এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মাসুম কবির (৪০), ভর্তি রোগীর মধ্যে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ভাবণীপুর গ্রামের মৃত সাবদার রহমানের ছেলে শাহিনুর রহমান (৩৮), যশোর শহরের কাজীপাড়া মসজিদের পাশের কামরুজ্জামানের ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান (৩৮), নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার আব্দুর রশিদ মিয়াজীর ছেলে রেজাউল করিম রানা (৩৩), সদর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে অহিদুল ইসলাম (২৯), বেনাপোল পোর্ট থানাস্থা শাখাঁরীপোড়া গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১৮), যশোর শহরের বকচর হুশতলা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আল শাহরিয়ার রোকন (২২), অভয়নগরের বুইকারা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলী শেখের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৩), বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার এসএম মোক্তাদির ছেলে এসএম সাগর আজিজ (৪২), শেখহাটি হাইকোর্ট মোড়ের মৃত ফজর আলীর ছেলে নুর ইসলাম (৩১), চৌগাছা উপজেলার বিশ্বাসপাড়ার মশিয়ার রহমানের ছেলে রিয়াদ (২১) এবং সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বামনআলী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান সাগরকে (৩০)  থানায় নিয়ে আসে।

এদিকে এই ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে কোতয়ালি থানার ওসি মো তাজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা জানার পরে রাতে প্রতিষ্ঠানটির সিসিটিভির ফুটেজ দেখে জানতে পারি মাহফুজকে ব্যাপক মারপিট করে হত্যা করা হয়েছে। এমন কি তাকে মারপিট করার পরে সে মলত্যাগ করে ফেলে। এসময় মাহফুজকে দিয়েই ওই মল পরিষ্কার করানো হয়। এই ঘটনায় নিহতের পিতা ১৪জনের নামে এজাহার দিলে পুলিশ তা মামলা হিসাবে রেকর্ড করেছে। বর্তমানে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি পুলিশের হেফাজেত রয়েছে এবং ওই কেন্দ্রে ১৬জন মাদকসেবী চিকিৎসার জন্য ভর্তি আছে।

ওই নিরাময় কেন্দ্রটি অবৈধ এই প্রশ্নের জবাবে পরিচালক আশরাফুল কবির ও মাসুম কবির জানিয়েছেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পারমিশন নিয়ে কেন্দ্রটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কেন্দ্রের বৈধতা নিয়ে যাবতীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পিটিয়ে হত্যার বিষয়ে তারা বলেছেন, দোতলায় অন্য রোগীর আকস্মিক ভাবে কী করেছে তা আমাদের জানা নেই। শুধু ওই ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. বাহাউদ্দিন জানিয়েছেন, যশোরের ওই কেন্দ্রটির বৈধতার জন্য আবেদনকরা হয়েছিল। সে গুলো যাচাই করা হচ্ছে।

অনুমোদনের আগে কেন্দ্র স্থাপন করা যায় কি-না এই প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেছেন, কেন্দ্র ঠিকমতো চালাতে পারছে কি-না তা স্থাপনের পরই চুড়ান্ত করা হয়। স্থাপন না করে কাজকর্ম না দেখে অনুমোদন দেওয়া হয় না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর