রবির কাছে ২২৭ কোটি টাকা চেয়ে মাহতাব উদ্দিনের মামলা

, আইন-আদালত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 14:13:33

অবসর–সুবিধা ও অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগে ২২৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ মামলা করেছেন।

সোমবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এই মামলা করেন। এতে রবি আজিয়াটা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিইও ইজাদ্দিন ইদ্রিস, বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান থায়াপরান এস সাঙ্গারা পিল্লাইসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

মাহতাব উদ্দিন ২০১০ সালে রবির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) পদে যোগ দিয়ে ২০১৬ সালে সিইও হন। পরের পাঁচ বছর তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন। পরে ২০২১ সালে তিনি পদত্যাগ করেন।

মাহতাব উদ্দিনের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, মাহতাব উদ্দিন ২০২১ সালের ২ আগস্ট পদত্যাগপত্র জমা দেন, যা একই বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। রবির পরিচালনা পর্ষদ সে বছরের ৫ আগস্ট শর্তহীনভাবে সে পদত্যাগপত্র গ্রহণের কথা এক চিঠিতে তাকে জানায়। তবে ২০২২ সালের ২২ মে রবি আজিয়াটা গ্রুপ মাহতাব উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার নোটিশ দেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, হঠাৎ করে রবি মাহতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের একটি আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। এই লেনদেন সম্পর্কে আজিয়াটা গ্রুপ ও রবির বোর্ড অবগত ছিল।

এরপর ওই বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে রবি। মাহতাবের মামলায় বলা হয়েছে, অনিয়মের ওই অভিযোগ ছিল ‘সম্পূর্ণ অসত্য’। ২০২১ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতেও ওই আর্থিক লেনদেন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি।

মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, আমি প্রায় তিন বছর চুপ ছিলাম। আজ আর নয়। বন্ধ দরজার আড়ালে যা যা হয়েছে সবকিছুই আমার রবি টিম, পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা জানার অধিকার রাখেন। ২০১৯ এর আগস্ট থেকে এ্যাক্সিয়াটা গ্রুপ এবং গ্রুপের জিসিইও (ইজ্জাদিন ইদ্রিস) এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে। কারণ, আমার চুক্তি নবায়ন এবং ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের গুরুতর অবহেলা। আমি যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে জিসিইও-এর চুক্তি ফিরিয়ে দিই। নভেম্বর ২০২০ এর এক আলোচনার পরে কোনো রকমের মনোমালিন্য ছাড়াই আমি সেখান থেকে সরে আসতে চাই, যার প্রত্যুত্তরে আমি সম্ভাব্য ফলাফলের হুমকিসহ ইমেইল পাই। সত্যি বলতে, তাদের দেওয়া মিথ্যা আশ্বাস এবং সংশোধিত বেতন-ভাতা আমার চাকরি, আমার স্বপ্ন, আমার সবকিছুকেই এক অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিয়েছিলো। এই সবকিছুই আমার কাজের চুক্তি লঙ্ঘন করেছিলো। এতকিছুর পরও আমি কখনোই আমার কঠোর পরিশ্রম এবং রবির প্রতি আমার অঙ্গীকারে ব্যঘাত ঘটতে দিইনি। ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি এই কম্পানির প্রতি দায়িত্ব পালন করে গেছি। যখন আমি রবি ছেড়ে দিই, ২০২১ এর আগস্টে, তখন আমার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার এবং রবির পারফরম্যান্স— দুটোই সফলতার শিখরে ছিল। আমার সময়ে কোম্পানিটা উপরের কিছু মানুষের ক্ষমতার দুর্ব্যবহারে নিমজ্জিত ছিল। আমার পদত্যাগের প্রায় ১০ মাস পরে, ২৫ মে ২০২২-এ, আমাকে জানানো হয় যে, আমি অবসর সুবিধাসমূহ পাব না, কারণ আমাকে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবরেই বহিষ্কার করা হয়েছে। একটি প্রসিদ্ধ কোম্পানি কি কখনও একজনকে বহিষ্কার করতে পারে, যে তার কোম্পানিতে আর কর্মী হিসেবেই নেই? তাও আবার পদত্যাগের ১০ মাস পর? জিসিইও সাহেব কিন্তু আমার পদত্যাগের পরও হয়রানি থামাননি। আমাকে বিভিন্ন ভাবে ফাঁসাতে চেয়েছেন, কিন্তু পারেননি। ২০১৯ এর এক ট্রানজেকশন নিয়েও কথা তুলেছেন; আইটেম এর ক্যাপেক্স/ওপেক্স হওয়া নিয়ে। বিক্রেতা থেকে শুরু করে সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষক এবং স্থানীয় ম্যানেজমেন্ট টিম কেউই কোনো অনৈতিক ঘটনা ঘটার ইঙ্গিত দেননি, যেটা রবির ২০২১-এর ফাইন্যানশিয়াল স্টেটমেন্টেও প্রতিফলিত হয়।

নিতান্তই করপোরেট প্রতিহিংসার কারণে ৩১ বছরের এক্সিকিউটিভ ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে দেখুন— চুক্তিবদ্ধ বোনাস, শেয়ার, অবসর সুবিধাসমূহ সবকিছু থেকেই আপনি বঞ্চিত হলেন; মর্যাদাহানি আর গুজবের কারণে করপোরেট জগতে কুখ্যাত হয়ে উঠলেন। একটি হাই প্রোফাইল ক্যারিয়ার এবং কয়েক দশকের অভিজ্ঞতার জায়গায় চলে আসে আর্থিক বঞ্চনা এবং মানসিক যন্ত্রণা। টাকা দিয়ে এই অবিচারের ক্ষতিপূরণ হবে না।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রবির ৬১ দশমিক ৮২ শতাংশ মালিকানা রয়েছে মালয়েশিয়ার বহুজাতিক কোম্পানি আজিয়াটার হাতে। এছাড়া ভারতী এয়ারটেল ২৮ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাকি ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর