মিতু হত্যা মামলায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের বিচার শুরু

, আইন-আদালত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 05:49:42

সাত বছর আগে চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে রাস্তায় মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

সোমবার (১৩ মার্চ) চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ৯ এপ্রিল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করে আদালত।

আদালত রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিতিতে ছিলেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত মহানগর পিপি প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, মামলাটির শুনানির সময় কাঠগড়ায় বাবুল আক্তারসহ (৪৬) পাঁচ আসামি উপস্থিত ছিলেন। অন্যরা আসামিরা হলেন–এহতেশামুল হক ভোলা (৫৪), মোতালেব মিয়া ওয়াসিম (৩৩), আনোয়ার হোসেন (২৮) ও শাহজাহান মিয়া (২৮)। এই মামলায় আরও দুই আসামি পলাতক রয়েছেন। চার্জ গঠনের আগে আদালতে উপস্থিত আসামিদের দোষী নাকি নির্দোষ-তা জানতে চেয়েছিল আদালত।’ এ সময় আসামিরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।

প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য আরও বলেন, একই সময় আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রামে না রেখে অন্যত্র কারাগারে রাখার বিষয়ে একটি আবেদন করেন। এ সময় নারাজি দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছেন, একাধিক মামলার আসামি ও সাক্ষী বাবুল আক্তার। বিভিন্ন মামলার ধার্য তারিখে তাঁকে অন্য কারাগার থেকে এখানে নিয়ে আসা সময়সাপেক্ষ ও ঝামেলায় পড়তে হয়।

অন্যদিকে আসামিপক্ষ বলেছেন, বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম কারাগারে নিরাপদবোধ করছেন না। পুলিশে কর্মরত থাকাবস্থায় তিনি কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছেন। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। পরে আদালত বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখার আদেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, আসামিপক্ষ বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখা হলে তাকে আলাদা কোনো সেলে বা শ্রেণিতে রাখার বিষয়ে আদালতে আবেদন করেন। এছাড়া তার অসুস্থতার কথাও বলা হয়। পরে আদালত বাবুল আক্তারকে জেল কোড অনুযায়ী চিকিৎসাসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। কোনো সমস্যা হলে পরে আদালতে একটা পিটিশন দাখিল করতে বলেন আসামিপক্ষকে।

২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে নগরীর জিইসি এলাকায় মাহমুদা খানম মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন মাহমুদার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘদিন ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্তের কাজ করেন।

পরে ডিবির হাত ঘুরে মামলাটি পিবিআই এর হাতে আসে। ২০২১ সালে ১১ মে মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়। পরদিন ১২ মে বুধবার পিবিআই প্রধান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাবুল নিজেই তাঁর স্ত্রী হত্যার সঙ্গে ‘জড়িত’।

বাবুলের দায়ের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। একইদিন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় বাবুলকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে নতুন করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর বাবুল কারাগারে রয়েছেন।

২০২১ সালে ৩ নভেম্বর বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ না করে মামলাটির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০২২ সালে ১০ অক্টোবর পিবিআই বাবুলকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত।

ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে বাবুলের সঙ্গে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এক নারী কর্মকর্তার সম্পর্ক হয়। এ সম্পর্কের জেরে বাবুলের পরিকল্পনায় মাহমুদাকে খুন করা হয়। এ জন্য বাবুল তাঁর সোর্স মুসার মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় খুনিদের ভাড়া করেন। তবে ঘটনার শুরু থেকে আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুসা ও খায়রুল ইসলাম প্রকাশ কালু পলাতক রয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর