ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতার সেই শিক্ষা কর্মকর্তার কারাদণ্ড

, আইন-আদালত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2023-08-30 01:56:08

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ফটিকছড়ি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (বরখাস্ত) আজিমেল কদরকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৪৫ হাজার অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুনসী আব্দুল মজিদ এই দণ্ডাদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।

দণ্ডিত আজিমেল কদর ঢাকা দোহার থানার দক্ষিণ জয়পাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ফটিকছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ উপজেলার বেড়াজালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার দুদকে আজিমেল কদরের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগকারী শিক্ষিকার দাবি, কর্মস্থল দুর্গম এলাকায় হওয়ায় তার বাড়ির নিকটবর্তী তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটিতে বদলির আবেদন করেন তিনি। আবেদনের পর বদলির জন্য তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। ৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরও আরও ১০ হাজার টাকা না দিলে বদলি হবে না বলে হুমকি দেন শিক্ষিকাকে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফাঁদ পেতে ঘুষের ১০ হাজার টাকাসহ হাতেনাতে ওই কর্মকর্তাকে আটক করেন দুদক কর্মকর্তারা। এই ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক জাফর আহমেদ। পরবর্তীতে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার নিষ্পত্তির জন্য মামলাটি সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত থেকে বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে পাঠানো হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় এবং ১৯৪৭ সনের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, বিচার শুরুর পর দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। বিচারিক কার্যক্রম শেষে বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় দেড় বছর কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। দণ্ডের অর্থ অনাদায়ে আরও ১ মাসের জেল। এবং ১৯৪৭ সনের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ১ বছর কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। দণ্ডের অর্থ অনাদায়ে আরও ১ মাস কারাদণ্ড দেন আদালত। দুটো সাজা পৃথকভাবে কার্যকর হবে। অর্থাৎ তাকে আড়াই বছর কারাদণ্ড ও ৪৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আপিলের কথা জানিয়ে জামিন আবেদন করেন তিনি। তবে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

দণ্ডিত আজিমেল কদর দুদকের হাতে আটকের পর তার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ওই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষামন্ত্রণালয়। অব্যাহতির পরপরই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা দায়ের করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। একই সাথে কেন বহিষ্কার করা হবে না মর্মে অভিযোগকারী শিক্ষিকা তাসলিমাকে শোকজ করা হয়। এরপর দুদকের কাছে আইনি সুরক্ষা চেয়ে চিঠি দেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর