নদী দখল: সচিব, মহাপরিচালক, ডিসির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ

, আইন-আদালত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার | 2023-11-14 21:47:59

উচ্ছেদের কয়েক মাসের মধ্যে আবারও বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় তীর দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান, ৫ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের ডিসিসহ ১৫ জন সরকারি কর্মকর্তাকে আদালত অবমাননার নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বেলা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।

নোটিশে আদালতের সকল আদেশ বাস্তবায়ন করে বাকঁখালী নদীটিকে দখল ও দূষণমুক্ত নদী ও নদী সংলগ্ন স্থানে নির্মিত ও নির্মিতব্য সকল স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সাথে এ নদী সংলগ্ন প্যারাবন সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। সাথে ক্ষতিগ্রস্ত ফেরাবন ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সকল দখলদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ ১৯ নভেম্বর সকাল ১০টার মধ্যে নোটিশকারী আইনজীবীকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় নোটিশ প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অবমাননার অভিযোগে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

যাদেরকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তারা হলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান কামরুন নাহার আহমেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ খলিলুর রহমান, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.ফারহিনা আহমেদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.নাহিদ রশিদ, স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.আব্দুল হামিদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এসএম শহিদুল ইসলাম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহীন ইমরান, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিল্লোল বিশ্বাস, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদ, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী।

বেলার পক্ষ থেকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, বাকখালী নদীটি রক্ষায় বিদ্যমান সকল দখলদার ও স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিট মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এ নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি কক্সবাজার পৌরসভাকে বাকঁখালী নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে নির্দেশনা দেন। আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও বিবাদীগণ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বাকখালী নদীর দখল ও দূষণ বন্ধ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে সঠিকভাবেই তদারকির মাধ্যমে নদীতে পুনরায় দখল প্রতিহত করে নদীকে দখলমুক্ত করতে এবং নদী সংলগ্ন প্যারাবন সুরক্ষা করতে যা দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর চরম অবজ্ঞা ও উদাসীনতার পরিচায়ক এবং আদালত অবমাননার শামিল।

আদালত অবমাননার নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমকালকে বলেন, বাঁকখালী নদী দখলের এই দৃশ্য আমার কাছে অত্যন্ত বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এদেশে নদী রক্ষার যে আইনগুলো আছে, প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, উচ্চ আদালতের যে রায়গুলো আছে সেগুলো একেবারে অর্থহীন করে ফেলা হয়েছে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে নদী হলো জীবন্ত সত্তা। মানুষকে হত্যা করলে যেমন শাস্তি হয়, সেরকম নদীকে হত্যা করলেও শাস্তি হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর