কোচিং বন্ধে করা রিটের শুনানির রায় ৭ ফেব্রুয়ারি

, আইন-আদালত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 09:53:15

কোচিং বাণিজ্য বন্ধে করা পাঁচটি রিটের শুনানির রায় ঘোষণার জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

রোববার (২৭ জানুয়ারি) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও রাজীব আল জলিলের সম্বনয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

আদালতে রিটকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এবং দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।

আদালতে আজ অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল।

কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে জন্য সরকার গত বছর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ নোটিশ দেয় সরকার। এসব নোটিশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২ নিয়ে শিক্ষকরা হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।

আদালত গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই চিঠির কার্যকারিতা চার মাসের জন্য স্থগিত কররার পাশাপাশি রুল জারি করে।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করার অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল করে। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ গত বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চেকে এ রুলের নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছিল।

পরে আদালত এ রুল নিষ্পত্তির জন্য সাবেক দুই অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামালকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়।

পরে চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত গত সপ্তাহে রোববার রায়ের জন্য রাখে। কিন্তু রায় ঘোষণার আগে ফিদা এম কামাল এ সংক্রান্ত বক্তব্য উপস্থাপন করতে চাইলে আদালত তাকে সে সুযোগ দেন।

ফিদা এম কামাল শুনানিতে বলেন, ‘নীতিমালাটি (কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২) স্বাধীন নয়। সরকারি কর্মচারী নীতিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী যেকোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। বেসরকারি শিক্ষকরা যদি আইন ভঙ্গ করেন তাহলে কী হবে?

শ্রেণি কক্ষের বাইরে কোচিং চলছে। ফলে ক্লাসকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। কোচিং শিক্ষা দিচ্ছে না। এটা শুধু পাশ করার পদ্ধতি বাতলে দিচ্ছে। এমপিও, ননএমপিও এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য করতে পারেন না।’

আদালত বলেন, ‘তাহলে আপনি পরামর্শ দিচ্ছেন, এই নীতিমালার অধীনে যেসব শিক্ষকরা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে?

ফিদা এম কামাল বলেন, ‘এটা একটা হোস্টাইল সিচ্যুয়েশন। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক দশজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশন দিতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তারা এটা করতে পারে না। এটা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

আদালত তখন বলে, ‘একজন শিক্ষার্থী যখন এসএসসিতে পড়ছে তখনই অভিভাবকরা তার মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে, তাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। ক্লাসরুমে মেডিকেল, বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যে পড়াশুনা সেটা দেওয়া হয় না। ফলে শিক্ষার্থী কোচিংয়ে যাচ্ছে। সরকার ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করছে না কেন?

ফিদা এম কামাল বলেন, ‘কোচিংয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাশ করছে, কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে না। কারণ ক্লাসরুমের শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষক সম্মানী পায় ক্লাসে শিক্ষা দেওয়ার জন্য, কোচিং তার পেশা নয়। প্রাইভেট টিউশনকে নীমিালায় অনুমোদন দেওয়া আছে, কোচিংকে নয়। কোচিং তার ইনহেরেন্ট (অন্তর্নিহিত) অধিকার নয়। সে শিক্ষা দিবে কিন্তু কোচ হতে পারবে না।’

শুনানির পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোচিং বাণিজ্য নিয়ে দুটি রিট আজকে রায় প্রদানের জন্য ধার্য ছিল। এ মামলায় দুজন অ্যামিকাস কিউরি ছিলেন, একজন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ, উনি উনার বক্তব্য আগেই শেষ করেছেন। আজকে আরেকজন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল তার বক্তব্য দিয়েছেন।

উনি আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন লিখিত আর্গুমেন্ট দিবেন বলে। আদালত উনার কথা গুরুত্ব সহকারে শুনে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি রায় প্রদানের জন্য ধার‌্য করেছেন। এবং আগামী রোববারের মধ্যে উনার লিখিত বক্তব্য জমা দিতে বলেছেন।’

খুরশীদ বলেন, ‘আদালত ব্যাখ্যা চেয়ে বলেছেন, কোনো একজন শিক্ষার্থী যদি ডাক্তার হতে চায় বা তার পরিবার চাচ্ছে সে ডাক্তার হোক। এখন সে যদি কোচিং না করে তাহলে সে কীভাবে এটা করতে পারে। এটাকে বাণিজ্য হিসেবে কেন আমরা ট্রিট করছি।’

আদালতকে উদ্বৃত করে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘নীতিমালার আওতায় মূল আইন না থাকা সত্ত্বেও নীতিমালার দিয়ে তো কাউকে আপনি শাস্তি দিতে পারবেন না। আইন থাকতে হবে। আইন নাই কিন্তু নীতিমালা আছে। এটা আইন কতটা পারমিট করে। এর ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত।

অর্থাৎ, আদালতের মোদ্দা কথা, আমি যেটা বুঝতে পেরেছি, সেটা হলো, একটা সুনির্দিষ্ট আইন থাকতে হবে। আইন না রেখে শুধূ নীতিমালাকে নিয়ে এ ধরনের পিউনিটিভ অ্যাকশন (শাস্তিমূলক ব্যবস্থা) কতটুকু নেওয়া যাবে এবং এর সাংবিধানিক একটা ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর