শিশু আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলায় আটক, বন্দি, অভিযুক্ত, আসামি বা অপরাধী শিশুর ছবি, নাম, ঠিকানা, পরিচিতি প্রচার-প্রকাশে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারসহ সকল গণমাধ্যমকে সতর্ক করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে দিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, প্রকাশিত খবরে শিশুর নাম, ঠিকানা, পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে এবং খবরে সঠিক শব্দ চয়ন না করে করে ডেইলি স্টার বেআইনি কাজ করেছে।
শিশুর ছবি, নাম, পরিচয়, প্রকাশ পায় বা শিশুকে চিহ্নিত করা যায়, এ ধরনের প্রতিবেদন যাতে ভবিষ্যতে আর ছাপা না হয়।
যেহেতু বিষয়টি নতুন তাই কোনো সাজা বা জরিমানা না করে তাদের সতর্ক করা হল, যেন ভবিষ্যতে এমনটা আর না ঘটে।
পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা, পরিচিতি প্রচার-প্রকাশের ক্ষেত্রে সকল গণমাধ্যমকে বিষয়টি মেনে চলার জন্য বলা হচ্ছে।
রায়ে আরও বলা হয়, শিশু আইনের মূল উদ্দেশ্য কোনো মামলায় বিচারের ক্ষেত্রে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করা, যা বিচারপূর্ব, বিচার চলা ও বিচার পরবর্তী পর্যন্ত বোঝায়। এ ক্ষেত্রে তাদের মর্যাদা বজায় রাখা, যাতে তারা সংশোধন ও পুনর্বাসনের সুযোগ পায়।
আদালতে রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান। ডেইলি স্টারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম।
গত বছরের ৫ নভেম্বর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ‘বয় গেটস টেন ইয়ার্স ফর কিলিং ক্লাসমেটস’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে। প্রকাশিত সে খবরে শিশু পরিচিতি প্রকাশ করা হয়।
যা স্পষ্টত শিশু আইন, ২০১৩ এর ২৮ ধারার লঙ্ঘন উল্লেখ করে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্ট রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন।
সে রিটে সংবাদ পত্র, ম্যাগাজিনসহ যেকোনো সংবাদ মাধ্যমে শিশু আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলার শিশু আসামি বা অভিযুক্তর নাম, পরিচয়, ঠিকানা, ছবিসহ তার পরিচিতি তুলে ধরা বন্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
শিশু আইন, ২০১৩ এর ২৮ ধারা অনুযায়ী শিশু অপরাধীর নাম, ঠিকানা, ছবিসহ তার পরিচিতি সংবাদপত্র, ম্যাগাজিনসহ যেকোনো সংবাদ মাধ্যমে প্রচার-প্রকাশ বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না প্রশ্নে রুল চাওয়া হয় রিটে।
আইন, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন-আদালত-মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি, ঢাকা রিপোর্টোর্স ইউনিটি (ডিআরইউ)’র সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদককে বিবাদী করা হয়।
সে রিট আবেদনটির চূড়ান্ত শুনানির পর মঙ্গলবার রায় দেন আদালত।
রায়ের পর আইনজীবী সুমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিশু আইনে বা কিশোর আদালতে কোনো মামলা যদি থাকে এবং এই মামলায় কোনো শিশু বা কিশোর জড়িত থাকলে তার নাম, ঠিকানা, পরিচিতি ব্যবহার করতে পারবেন না কোনো মিডিয়াতে। ডেইলি স্টার গত বছরের নভেম্বরে একটি নিউজে শিশুর নাম ঠিকানা ব্যবহার করে একটি শিশুকে আইডেন্টিফাই করেছে।
বিষয়টি নিয়ে রিট আবেদনের পর শুনানি হয়ে মঙ্গলবার রায় দিয়েছেন আদালত।
সুমন বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে জন্যে ডেইলি স্টারসহ সকল গণমাধ্যমকে সতর্ক করার পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে জন্য আইন সচিব, তথ্য সচিব ও ল’ রিপোর্টার্স ফোরামকে তদারকি করতে বলা হয়েছে রায়ে।
শিশু আইন, ২০১৩ এর ‘শিশু-আদালতের কার্যক্রমের গোপনীয়তা’ শিরোনামে ২৮ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, শিশু-আদালতে বিচারাধীন কোন মামলায় জড়িত বা সাক্ষ্য প্রদানকারী কোন শিশুর ছবি বা এমন কোন বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম অথবা ইন্টারনেটে প্রকাশ বা প্রচার করা যাইবে না যাহা সংশ্লিষ্ট শিশুকে শনাক্তকরণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।
উপধারা ২ এ বলা হয়েছে, উপধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, শিশুর ছবি, বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রকাশ করা শিশুর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হইবে না মর্মে শিশু-আদালতের নিকট প্রতীয়মান হইলে উক্ত আদালত সংশ্লিষ্ট শিশুর ছবি, বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রকাশের অনুমতি প্রদান করিতে পারিবে।