স্ত্রী হত্যার মামলায় আজ মুক্তি পাচ্ছেন না বাবুল আক্তার

, আইন-আদালত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-12-01 20:05:26

আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী বাবুল আক্তারের মুক্তি পাওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী তার জামিনের বেইল বন্ড কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। তবে আজ তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন। তিনি জানান, তিনি (বাবুল আক্তার) আজ মুক্তি পাচ্ছেন না, এটি কনফার্ম করতে পারি। কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকলে তার মুক্তি আগামীকাল হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।বেইল বন্ড পেয়েছি। ক্লিয়ারেন্স নিতে পারিনি আজ। কালকের দিকে এটা নিয়ে কাজ করবো। আজ রাত হওয়ায় কাজ করার সুযোগ নেই।

এর আগে, রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত থেকে জামিনের বেইল বন্ড কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেঞ্চ সহকারী ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে জামিন স্থগিত করার কথা সকাল থেকে বলা হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত কোনো কাগজপত্র দাখিল করতে পারেনি। যার কারণে বিকেলে বেইল বন্ড স্বাক্ষর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাবুল আক্তারকে মুক্তির পর বরণ করে নিতে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ইসরাত জাহান মুক্তা, খালাতো ভাই আব্দুল মাজেদসহ ৫ থেকে ৬ জন স্বজন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন। কিছুক্ষণ পর কারা কর্মকর্তারা তাদেরকে প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর পৌনে ছয়টার দিকে তারা পুনরায় কারাগারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন। তারা জানান, আজকে বাবুল আক্তার মুক্তি পাচ্ছেন না। এসময় সাংবাদিকরা তাদের ‘কেন মুক্তি পাচ্ছেন’ এমন প্রশ্ন করতে থাকেন। তবে স্ত্রী মুক্তা কোনো কথা বলেননি। তাদের সঙ্গে থাকা নূরে আলম নামের বাবুল আক্তারের এক স্বজন বলেন, উনি আজকে হয়ত জামিনে মুক্তি পাবেন, সেজন্য আমরা এখানে এসেছিলাম। তবে আমরা ওখান থেকে কবে ছাড়া পাবে বা কখন আসবে এমন তথ্য পাইনি। তাই আপনাদেরকেও জানাতে পারছি না।

সেখানে থাকা বাবুল আক্তারের আইনজীবী মামুনুল হকে কাছে কেন মুক্তি পাবেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বেইল বন্ডটা আসতে প্রায় সাড়ে চারটা হয়ে গেছে। যার কারণে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সব প্রক্রিয়া শেষ করা আজকে সম্ভব না। আশা করি আগামীকাল হবে।

বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন সন্ধ্যার দিকে জানান, নানা টালবাহানার পর আজ বিকেলে আদালত থেকে জামিনের বেইল বন্ড কারাগারে পাঠানো হয়। কথা ছিল বিকেল ৫টায় তাকে মুক্তি দিবে। আমাদের বলা হয়েছে, তার আগেই যেন আমরা যাই। কিন্তু আগে গেলেও আজ মুক্তি দিবে না বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল সকাল ১০টার আগেই মুক্তি দেওয়ার কথা তারা জানিয়েছে।

জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামিন আদেশেই উচ্চ আদালত বলেছেন স্টে অর্ডার ছাড়া তার মুক্তি কেউ আটকাতে পারে না। আর জামিন হওয়ার পরেও তিনি কারাগারে থাকাটা তো কষ্ট দেওয়া, হয়রানি করা। যে অশুভ শক্তি শুরু থেকেই কাজ করছে এর পেছনে সেই শক্তিই এখন প্রভাব বিস্তার করছে। মুক্তি দিলে সে তো পালিয়ে যাচ্ছে না। কোর্ট যদি তাকে আবার আত্মসমর্পণ করতে বলে, তিনি করবেন।

এদিকে বাবুল আক্তারকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছেন মিতুর বাবা। আগামীকাল মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতির আদালতে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

গত ২৭ নভেম্বর স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে বাবুলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। ১৮ আগস্ট বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

তবে মামলায় স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একইদিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।

এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

গত বছরের ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর