বিডিআর বিদ্রোহ: হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা

, আইন-আদালত

মিজানুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-31 03:12:30

বিস্ফোরক আইনের মামলা চলতি বছরে নিষ্পত্তির প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। ১০ বছের আগের ২০০৯ সালের এই দিনে তৎকালিন সুশৃঙ্খল সীমান্তরক্ষা বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর সদর দফতরে বিপথগামী সদস্যদের বিদ্রোহে নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। দেশের বিচারিক ইতিহাসে একটি হত্যা মামলায় সবচাইতে বেশি সংখ্যক আসামি নিয়ে পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুইটি মামলা দায়ের হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামি পক্ষের আপিলের রায় হলেও বিচারপ্রার্থীরা অপেক্ষা করছে পূর্ণাঙ্গ রায়ের।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশের ইতিহাসে সবচাইতে বেশি সংখ্যক আসামি ছিল এই মামলায়। আপিলের রায় লিখতে বেশি সময় লাগবে এটাই স্বাভাবিক।

তবে কবে এই আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হতে পারে তা নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি অ্যাটর্নি জেনারেল।

অন্যদিকে অস্ত্র আইনে হওয়া পৃথক মামলাটি বিচারিক আদালতে এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।

রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় সময়ক্ষেপণ করছে মন্তব্য করে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ বলেন, পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় হত্যা মামলায় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আসামি পক্ষের আপিলের রায়ে খালাস পেলেও  বিস্ফোরক আইনের মামলা বিচারাধীন থাকায় অনেক আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। বিস্ফোরক আইনে মামলা থাকায় তাদেরকে রাখা কারাগারে হয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থেই মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের সময় আবেদনের কারণেই মামলার বিচারে কালক্ষেপণ হয়েছে বলে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারেফ হোসেন কাজল বলেন, আমরা আশা করছি এ বছরেই মামলার বিচারিক কার‌্যক্রম শেষ করতে পারবো।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২০০ জনকে। হাইকোর্টের রায়ে খালাস পেয়েছেন ৪৫ জন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের নামে পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন । বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৮৪৬ বিডিআর জওয়ানকে। মামলার অন্য চার আসামি বিচার চলাকালে মারা যান।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলায় ১৫২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেন বিচারিক আদালত। এদের একজন ছাড়া সবাই তৎকালীন বিডিআরের সদস্য। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৬১ জনকে। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পান আরও ২৫৬ জন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন আসামি। সাজা হয় মোট ৫৬৮ জনের।

এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। ৬৯ জনের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায়ে আদালত তার পর্যবেক্ষণে নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করেছেন।

আদালত বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সীমান্তরক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এই কলঙ্কচিহ্ন তাঁদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে। একসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নজির ইতিহাসে নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর