সিটি করপোরেশনের জবাবে হাইকোর্টের অসন্তুষ্টি

, আইন-আদালত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 11:55:21

রাজধানীতে বায়ুদূষণ রোধে নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের জবাবে সন্তুষ্ট হননি হাইকোর্ট। ফলে আগামী ১০ এপ্রিল পুনরায় এ জবাব দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনে করা মন্তব্যে 'বাংলাদেশকে শীর্ষে রাখা ও এই প্রতিবেদনে সংশয় রয়েছে' বলায় পরিবেশ অধিদফতরের এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক জিয়াউল হককে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।

বুধবার (১৩ মার্চ) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান এবং বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ঢাকার সিটি কর্পোরেশন ও পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালককে জবাব দাখিল করার আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ, সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন নুরুন্নাহার আক্তার এবং পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে যাদের কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে থেকে একটি রিট করা হয়।

রিটের পক্ষে থাকা আইনজীবী মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'রুলে ঢাকা শহরের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না সংশ্লিষ্টদের কাছে তা জানতে চেয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব চাওয়া হয়েছে।'

মনজিল মোরসেদ জানান, আদেশে ঢাকা শহরের যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার (রাস্তায় ও নির্মাণাধীন কাজের জায়গা) কাজ চলছে সেসব এলাকা ঘেরাও করে কাজ করার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ১৫ দিনের মধ্যে আদালতের এ আদেশ পালন করে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিফতরের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে এবং যেসব এলাকা ধুলাবালি প্রবণ, যেসব এলাকায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিনে দুইবার পানি ছিটাতে দুই সিটির মেয়র ও নির্বাহীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যাদের কারণে বায়ুদূষণের সৃষ্টি হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সপ্তাহে দুইবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পরিবেশ আদালতের মহাপরিচালকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে। এ আদেশ পালন করে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে বলে জানান মনজিল মোরশেদ।

মনজিল মোরসেদ বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিলেন ডিজি হেলথকে এবং উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছিল প্রতিদিন দুবার যেসব জায়গায় ধুলার উৎপত্তি হচ্ছে সেসব জায়গায় পানি ছিটানোর জন্য এবং অন্যান্য জায়গায় যেসব নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে সেগুলো ঢেকে দেওয়ার জন্য। আর ডিজিকে বলেছিল মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ধুলার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আজ ডিজি পক্ষে এ্যাফিডেভিট দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা বলেছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা তারা বলেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন কমপ্লাইনস হয়নি বলে আবার তা দিতে বলেছেন। তারা আদালতে কয়টা ছবি দিয়ে বলেছে, কোথায় কোথায় তারা পানি ছিটিয়েছে। কিন্তু আদালতের যেভাবে নির্দেশ ছিল সেভাবে তারা করেনি। তারা পানি ছিটায়নি। বাংলা একাডেমিতে পানি ছিটানোর কথা তারা বলেছে। কিন্তু মেলা হলে বাংলা এতকাডেমিতে এমনিতেই পানি ছিটানো হয়। এছাড়া বায়ু দূষণ নিয়ে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছি। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে, ঢাকা শহর বায়ু দূষণের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় শহর। ওই প্রতিবেদনে পরিবেশ অধিদফতরের একজন পরিচালক বলেছেন যে, এই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদনটি সঠিক না।'

তখন আদালত বললেন, 'তিনি যে বললেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট সঠিক না, আমরা তো দেখতে পাচ্ছি প্র্যাকটিক্যালি, ঢাকা শহরের কি অবস্থা। সেই ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর কি পদক্ষেপ নিচ্ছে? পরিবেশ অধিদফতর তো কোনো কাজ করছে না। যার ফলে মারাত্মক বায়ু দূষণ হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতর যদি কাজ করতো তাহলে তো মানুষের এই অবস্থা হতো না। কাজ না করলে আপনার ভবিষ্যৎ বংশধরদের রক্ষা করতে পারবেন না। এদেশের অনেকেই তো বিদেশে সেকেন্ড হোম করছে, তারা চলে যাবে। আমরা যারা এদেশে থাকব তাদের জন্য তো একটি শুদ্ধ বায়ু সেবনের পরিবেশ যদি না থাকে তাহলে আমাদের কারো জীবন নিরাপদ থাকবে না। ফলে অবশ্যই আপনাদের সঠিকভাবে কাজগুলো করতে হবে।'

এজন্য ওই পরিচালককে তলব করেছে আদালত। আগামী ১০ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে তাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতর কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে। আরেকটা নির্দেশনা দিয়েছেন সেটি হলো ফার্মগেটসহ রাজধানীর দুই জায়গায় বায়ু দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করতে যে ব্যবস্থা নিয়েছেন সেটিকে আরও কয়েকটি স্থানে বিস্তৃত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান রিটকারী আইনজীবী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর