খাদ্যে ভেজালের শাস্তি

, আইন-আদালত

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 20:40:00

সারা বছর খাদ্যে ভেজালের প্রবণতা থাকলেও রমজান এলেই খাদ্যে ভেজালের তৎপরতা বেড়ে যায়। ফুটপাত থেকে অভিজাত হোটেল রেস্টুরেন্ট কোনোটাই ভেজালমুক্ত নয়।

ভেজাল খাদ্য এক ভয়ঙ্কর খুনি
মানুষ খুনের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। অথচ ভেজাল খাদ্যের মাধ্যমে প্রতিদিন শতশত মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাই অপরাধ বিশেষজ্ঞরা ভেজালকারীদের ভয়ঙ্কর খুনিরূপে জ্ঞান করেন।

২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সারাদেশে এক জরিপ চালায়। তারা ২১ হাজার ৮৬০টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করেন। পরীক্ষায় তারা ৫০ শতাংশ খাদ্য পণ্যে ভেজাল পায়। মহাখালী পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের খাদ্য পরীক্ষাগারের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্য পণ্য ভেজাল এবং তা দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

খাদ্যে ভেজাল দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ
খাদ্যে ভেজাল দিলে তা বিক্রির ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। সত্যের সাথে মিথ্যার সংমিশ্রন ঘটাতে হয়। অথচ আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাত করেছেন, তোমরা সত্যের সঙ্গে অসত্যের মিশ্রণ ঘটিয়ো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না।’ -সূরা বাকারা: ৪২

একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বাজারে এক খাদ্যস্তুপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি খাদ্যস্তুপের ভেতরে হাত প্রবেশ করিয়ে দেখেন স্তুপের ভেতরে ভেজা। খাদ্য বিক্রেতার কাছে তিনি এর কারণ জানতে চাইলেন- এটি কেমন কথা? সে বলল- হে আল্লাহর রাসূল, এগুলো বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। রাসূল (সা.) বললেন- তাহলে ভেজা খাদ্যগুলো উপরে রাখোনি কেন, যাতে মানুষ দেখতে পেত। অত:পর রাসূল (সা.) বললেন- যে ব্যক্তি প্রতারণা করবে সে আমার উম্মাত নয়। -সহিহ মুসলিম শরীফ: ১০২

খাদ্যে ভেজাল দিয়ে উপার্জিত অর্থ অবৈধ এবং হারাম। আর ইসলামে অবৈধ ও হারাম অর্থ উপার্জনকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

আইনে খাদ্যে ভেজালের শাস্তি
ভারতীয় উপমহাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রনের জন্য ১৮৬০ সালে প্রণীত হয়েছিল দণ্ডবিধি। দণ্ডবিধির ২৭২ থেকে ২৭৬ ধারা পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল, বাজারজাতকরণ ও বিক্রির শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে। উক্ত ধারানুসারে ভেজালকারীর সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।

আইনটি বেশ পুরোনো ও শাস্তি অপ্রতুল হওয়ায় ১৯৫৯ সালে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়। উক্ত অধ্যাদেশের ৬ থেকে ৩৭ ধারা পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল, বাজারজাতকরণ ও বিক্রির শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে। এ আইনে এসব অপরাধের শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড ও তিনলাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়।

কিন্তু এ আইন প্রণয়ন করেও খাদ্যে ভেজাল রোধ করা সম্ভব না হওয়ায় আরও কঠোরতম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয় দেখা দেয়। সে প্রেক্ষিতে খাদ্যদ্রব্য কিংবা ঔষধে ভেজাল মেশালে, বিপণন কিংবা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন বা ১৪ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রেখে ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইন পাশ করা হয়। উক্ত আইনের ২৫-গ ধারায় এসব শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে দিন দিন কঠোর আইন প্রণীত হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সাজার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবু ভেজাল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ভেজাল প্রতিরোধে আইনের পাশাপাশি প্রয়োজন জন সচেতনতা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর