সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপপ্রয়োগ রোধে মনিটরিং চান কূটনীতিকরা

, আইন-আদালত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 23:54:33

বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আইনের অপপ্রয়োগ রোধে মনিটরিং ব্যবস্থা চান বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, অপপ্রয়োগ যাতে না হয় সেজন্য শিগগিরই মনিটরিং ব্যবস্থার একটা বিধি করব।

রোববার (১৯) দুপুরে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এরপর মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন,ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে উনারা মনিটরিং চান। এই অ্যাক্ট করার আগে সম্পাদক কাউন্সিলের সঙ্গে অ্যাটকোর সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা সকলের সঙ্গে বসে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরিবর্তনও এনেছিলাম এবং কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কিন্তু আমরা মনিটিরিংয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত সিরিয়াস, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করা বা স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করিনি। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব হোক বা জনগণের বক্তব্যের স্বাধীনতা খর্ব হোক সেজন্য এই আইন করা হয়নি। শুধুমাত্র সাইবার ক্রাইম মোকাবেলা করার জন্য আইনটা করা হয়েছে। এটা যেহেতু সারাবিশ্বেই নতুন একটা আইন। অনেক হয়তো ভালো মন্দ আছে। ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দিতে পারে, সেটা আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে আধুনিক করার মাধ্যমে সব সময় এগিয়ে নিয়ে যাব।

আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে অতি সম্প্রতি দুটো ঘটনা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি দুটি ঘটনা ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী ইমতিয়াজ মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেখানে খাগড়াছড়িতে যে ম্যাজিস্ট্রেট ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট জারি করেছেন তিনি সেটা করতে পারেন না। কারণ সেটা সম্পূর্ণ সাইবার ট্রাইব্যুনালভুক্ত।

সে কারণে পরদিনই ত্রুটি ধরে ইমতিয়াজ মাহমুদের আইনজীবীকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে বলা হয়। পরে তাকে জামিন দেওয়া হয়। হেনরী স্বপনকে জামিন দেওয়া হয়। আমরা এরকমভাবে মনিটরিং করে যাচ্ছি। কিন্তু এটাও ঠিক মনিটরিংয়ের জন্য একটা সুস্পষ্ট জায়গা থাকা উচিত।

তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি, আমরা খুব শিগগিরই মনিটিরিংয়ের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসব। কূটনীতিকরাও আলাপ করবে এবং সহায়তা করবে। আলাপ শেষ হলে তাদের সঙ্গে আবার আলাপ হতে পারে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নষ্ট করার জন্য করিনি। এটা করাই হয়েছে শুধু সাইবার ক্রাইম মোকাবেলা করার জন্য।

তিনি বলেন, আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারার মত যাতে কখনো অ্যাবিউস বা মিসইউসড এর প্রশ্ন না ওঠে সেই কারণে আমরা একটা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে চাই। এ রকম মনিটরিং করা হলে আইনটা পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হবে। আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় যখন অপপ্রয়োগ করা হচ্ছিল তখন পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাকে দিয়ে কমিটি করা হয়। এখানেও সেরকম কমিটি করব।

আইনে তাহলে অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে কীনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে যত আইন আছে সব আইনই অপপ্রয়োগ করার একটু সুযোগ আছে। এটা এমন না যে শুধু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ব্যাপারে হয়েছে। সারাবিশ্বে যত আইন আছে সবগুলো অপপ্রয়োগ করে বলেই আদালত আছে, আইনজীবীরা আছে। সেক্ষেত্রে এখানেও কিছু হতে পারে, কিন্তু যাতে না হয় সেই কারণে সরকার সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন 'বি' স্ট্যাটাসে আছে। সেটাকে 'বি' স্ট্যাটাস থেকে 'এ' স্ট্যাটাসে আপগ্রেডেশন করতে বলেছেন। কিছু বিষয় আছে সেগুলো সম্পন্ন করার কথা বলেছেন। সেজন্য কাজ করতে যে সকল সহায়তা প্রয়োজন উনারা সেটা দেবেন।

উনারা বলেছেন চেয়ারম্যান সিলেকশন প্রসেসে আইনের ৭ ধারায় একটা সার্স কমিটি আছে যেটাতে স্পিকার চেয়ারম্যান এবং আরও ৫ জন সদস্য আছেন। উনারা বলেছেন এই কমিটি থাকুক সঙ্গে সুশীল সমাজের সঙ্গে যদি আলাপ আলোচনা করে যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। সেটা আরও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, গ্রহণযোগ্যতা পেলে সারাবিশ্বে হিউম্যান রাইটস কমিশন যারা আপগ্রেডেশন করেন তারাও সন্তুষ্ট হবেন। ‘বি’ স্ট্যাটাস থেকে এ স্ট্যাটাসে যাওয়ার পথ আরও সুগম হবে।

তিনি বলেন, আরেকটা ছিল আর্থিক স্বাধীনতা। আমি উনাদের বলেছি আর্থিকভাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বাধীন। কারণ বাজেট বরাদ্দ তাদের চাহিদা মোতাবেক দেওয়া হয়।

বৈঠকে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বরার্ট চ্যার্টাটন ডিকশন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার পিটার ফারেন হোল্টজ, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রিনি হলেন স্টেইন সুইডেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার অ্যান্ডার্স অর্থোস্ট্রমসহ জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস ও ইউএনডিপির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর