স্থিতাবস্থার মেয়াদ বাড়ল, এখনই সুবিধা পাবেন না ঋণ খেলাপিরা

, আইন-আদালত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 12:51:02

ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তির ওপর দেওয়া স্থিতাবস্থার মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়িয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে এখনই বিশেষ সুবিধা পাবেন না ঋণ খেলাপিরা।

সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বাংলাদেশে ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ খেলাপিদের তালিকা জমা দিলেও তা গোপনীয়তার স্বার্থে প্রকাশ করা হয়নি। তবে ১০, ৪৭৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে দুই লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এর মধ্যে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ অনাদায়ী রয়েছে। আর আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় ৮০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণের হদিসই পাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সোমবার হাইকোর্টে দাখিল করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুবে আলম ও আইনজীবী মো. মনীরুজ্জামান।

গত ১৬ মে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ শিরোনামে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খেলাপি ঋণের অনারোপিত সুদ মওকুফ সুবিধার পাশাপাশি খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের দায়ের করা মামলা স্থগিত রাখার পাশাপাশি যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন, তারা সুদে ১০ শতাংশ রেয়াত পাবেন।

ওই বিজ্ঞপ্তি জারির পর দিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋণ খেলাপিদের গণসুবিধা দিয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব ঋণ খেলাপিই পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবে।

এ বিজ্ঞপ্তির পর একটি সম্পূরক আবেদন করে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। ওই আবেদনের শুনানি শেষে গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঋণ খেলাপির তথ্য ২৪ জুনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত। সোমবার হাইকোর্টে বাংলাদেশ ব্যাংক দু’টি ভলিউমে খামে সিলগালা করা তথ্য জমা দেয়।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এইচআরপিবির রিটে ঋণ খেলাপিদের তালিকা, ঋণের সুদ মওকুফের পরিমাণ ও মওকুফের ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংকের সাবেক সিইও মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, আইন সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চার সপ্তাহের মধ্যে এ জবাব দিতে বলা হয়।

তার আগে গত ২৩ জানুয়ারি এইচআরপিবি একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে সাতদিনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের বিষয় তদন্ত ও প্রতিরোধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৯৫৩ সালের ইনকোয়ারি কমিশন অ্যাক্টের অধীনে একটি কমিশন গঠনের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। নোটিশের জবাব না পেয়ে এইচআরপিবির পক্ষে রিট করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর