পা হারানো রাসেলকে মাসে ৫ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ

, আইন-আদালত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 18:31:39

বাস চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রীনলাইন পরিবহনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রতি মাসের ৭ তারিখে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে তাদের। কিস্তির টাকা পরিশোধের পর প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ারও নির্দেশ দেন। আগামী ৯ মাসে ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে গ্রীনলাইন পরিবহনকে।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিচারপতি এস আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালত সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'যে লোক আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার ফন্দিফিকির খোঁজে তাকে সরকার কিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া সেটা আমরা দেখব।’

আদালতে গ্রীনলাইনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. ওজিউল্লাহ। রিটের পক্ষে ছিলেন খন্দকার সামসুল হক রেজা ও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আলম মাহমুদ বাশার।

আগামী ১৬ জুলাই এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে। গত ২২ মে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ২৫ জুন পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন। কিন্তু এক মাসেও গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ রাসেল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

এদিকে, গ্রীনলাইন পরিবহনের মালিক পক্ষ আদালতে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমানো এবং কিস্তিতে পরিশোধের একটি আবেদন করে আদালতে। শুনানিতে আদালত গ্রীনলাইনের আইনজীবী ওজিউল্লাহর কাছে জানতে চান আপনারা কতো টাকা দিয়েছেন?

জবাবে আইনজীবী ওজিউল্লাহ বলেন, 'চিকিৎসা বাবদ সাড়ে ৩লাখ টাকা দিয়েছি।'

আদালত বলেন, 'আপনারা অসহায় এ ছেলেটার একটা ব্যবস্থা করতে পারতেন। কোনোভাবে সহযোগিতা করতে পারতেন।'

'আপনারা আপিল বিভাগে গেছেন, সেখানে নাকচ হয়েছে। এখন আমরা বিষয়টা শুনতে বাধ্য। যদি ২৫ লাখ টাকা চিকিৎসার জন্য এবং বাকি ২৫ লাখ তার জীবন নির্বাহের জন্য দিতে বলা হতো। কিন্তু মানুষ হিসেবেও কিছু করেননি। আপনাদের আচরণ ছিল অশোভনীয়। এখন ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ কমানোর কোনো সুযোগ নেই।'

আদালত আরও বলেন, 'আপনারা ক্ষতিপূরণ কমানো এবং কিস্তিতে দেয়ার সুযোগ চাইছেন। তার ওপর ইচ্ছাকৃত গাড়ি চড়ানোতে পা হারিয়েছে। অথচ ছেলেটার একটু খোঁজ নিলেন না।'

আদালত জানতে চান, আজকে কী কোনো টাকা দিয়েছেন?

আইনজীবী ওজিউল্লাহ নীরব থাকলে রিট আবেদনের আইনজীবী খন্দকার সামসুল হক রেজা দাঁড়িয়ে বলেন, 'তারা আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে তাও জানায়নি। প্রতিদিন তাদের আয় ১ কোটি টাকা।'

আদালত বলেন, 'আপনারাতো দেউলিয়া হয়ে যাননি। কিছু টাকা দিলে কী হতো। ছেলেটার সামনে এখনো অনেক সময় পড়ে আছে।'

এ সময় বিআরটিএর পক্ষের আইনজীবী বলেন, 'বিআরটিএ ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কমিটি গঠন করেছে এ কমিটির কার্যক্রম এখনো চলছে।'

আদালত বলেন, 'আমরা কমিটি নয় অ্যাকশন দেখতে চাই। সড়কে এখনো বিশৃঙ্খলা রয়েছে। এবারের ঈদে অন্তত ৪৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে, আহত হয়েছে ৭শ। আপনারা কিসের নিরাপত্তা দিচ্ছেন?'

বিআরটিএর আইনজীবী আবারো বলেন, 'আমরা কমিটি করেছি।'

আদালত বলেন, 'এটা গতানুগতিক। মানুষ মারা যাচ্ছে। বিআরটিএ কিছু করতে পারছে না।'

আদালত কঠোর ভাষায় গ্রীনলাইনের উদ্দেশ্যে বলেন, 'যদি আপনারা আদেশ লঙ্ঘন করেন, তাহলে আমরাও অন্য ব্যবস্থা নেব। কোনোভাবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমানোর সুযোগ নেই। যে লোক আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার ফন্দিফিকির খোঁজে তাকে সরকার কীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় সেটা আমরা দেখব। আপনারা ধর্মঘট করতে পারেন। আমাদের কিছু যায় আসেনা। আমরা শপথ নিয়েছি। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব। অনেক বেয়াদবি করেছেন, আমরা সহ্য করেছি। ম্যানেজারের আচরণ ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ। এরপরও আদালত প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়ার আদেশ দেন।'

গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারের হাতে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ। তার আগে গত ৪ এপ্রিল ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ৩১ মার্চ গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

গত বছর ২৮ এপ্রিল রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় গাইবান্ধার একই এলাকার বাসিন্দা জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের আওয়ামী লীগ সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি রিট আবেদন করেন।

এই রিট আবেদনে ২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এই রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ১২ মার্চ ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর