রণদা প্রসাদ হত্যা মামলায় মাহবুবুরের মৃত্যুদণ্ড

, আইন-আদালত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 17:09:15

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলেসহ ৭ জনকে হত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে মাহবুব ওরফে মাহেবুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনটি অভিযোগেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার দণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে রায়ে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেন। সকাল ১০ টা ৫২ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। এরপর বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার রায় পড়েন। চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।

রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত, মোকলেসুর রহমান বাদল, জেয়াদ আল মালুম ও তাপস কান্তি বল প্রমুখ।

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার সঙ্গে নিহত ভবানী প্রসাদ সাহার  স্ত্রী শ্রীমতি সাহা, ছেলে রাজিব প্রসাদ সাহা ও মহাবীর পতিও ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।

দুই মাস অপেক্ষমান থাকার পর বুধবার ট্রাইব্যুনাল রায়ের এ দিন ধার্য করেন। গত ২৪ এপ্রিল দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগে অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের মামলার রায় অপক্ষেমান রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় রায়ের দিন ধার্য করা হয়।

রণদা প্রসাদ সাহার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহার স্ত্রী শ্রীমতি সাহা ও ছেলে রাজিব প্রসাদ সাহা

 

ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত। তার সঙ্গে ছিলেন তাপস কান্তি বল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম।

রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত বলেন, রায়ে বলা হয়েছে আসামি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগই প্রসিকিউশন সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। রণদা প্রসাদ সাহা সারাজীবন মানবতার পক্ষে কাজ করেছেন। তাকে হত্যা করা, অপহরণ করা, তার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় গণহত্যা চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনাদের সহযোগিতায়। এ অপরাধে সঙ্গে ছিলেন মাহবুবুরের পিতা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল ওয়াদুদ ও বড় ভাই মান্নান। এ দু’জনই মারা গেছেন। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, তারা যে অপরাধ করেছেন তা গুরুতর।

রায়ে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের দায়িত্ব মামলার অভিযোগ প্রমাণ করা। আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। প্রসিকিউশন সততা, আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রণদা প্রসাদ সাহার নাতি ও হত্যার শিকার ভবানী প্রসাদ সাহার ছেলে রাজিব প্রসাদ সাহা বলেন, ঠাকুরদা আরপি সাহা ও বাবা ভবানী প্রসাদ সাহা এ দেশ ও জাতির জন্য বিশাল ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। আমরা তাদের ত্যাগের বিশাল বোঝা বহন করে চলছিলাম। এ রায়ের মধ্য দিয়ে বোঝা থেকে হালকা হওয়ার সুযোগ পেলাম।

গত বছরের ২৮ মার্চ আসামি মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি আসামি বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মাহবুবুর রহমান জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। তিনি তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করে একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একসময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসা করতেন রণদা প্রসাদ সাহা। থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সে বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যদের ধরে নিয়ে যান আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর