ডেঙ্গু মশা নিধনের সঠিক ওষুধ কবে আসবে জানতে চান হাইকোর্ট

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 09:05:58

ডেঙ্গু মশা নিধনের সঠিক ওষুধ কবে আসবে বৃহস্পতিবারের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে দুই সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।

আদালতে ঢাকা উত্তর সিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু ও দক্ষিণের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

শুনানির শুরুতে ঢাকা উত্তর সিটির আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু গত এক সপ্তাহে মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম তুলে ধরেন। আদালত তখন জানতে চান—‘ওষুধ আনার কী হলো?’

আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু বলেন, ‘গত ২৭ জুলাই কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত অনুসারে পরমাণু শক্তি কমিশনে এ বিষয়ে একটি মিটিং হয়েছে, আরও অধিকতর কার্যকর ওষুধ কিভাবে দেওয়া যায়।’

তখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘আরও অধিকতর কার্যকর লাগবে কেন? যেটা আছে সেটা কাজ করছে না?’ আইনজীবী বলেন, ‘কাজ হচ্ছে’। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘আমার ধারণা এ ওষুধে কাজ হচ্ছে না’।

তখন আইনজীবী বলেন, ‘আমরা তো সরাসরি ওষুধ আনতে পারব না। চীন থেকে এ ওষুধ আনা হবে। তার জন্য রেজিস্ট্রেশন লাগবে।’

তখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘এই যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, এটা কী কারণে হয়েছে?’
আইনজীবী বলেন, ‘আপনারা রুল জারির পর গতি বেড়েছে।’ আদালত বলেন, ‘এটা (ওষুধ ছিটানো) কি কার্যকরী হচ্ছে?’ আইনজীবী বলেন, ‘হচ্ছে, কয়েকদিন সময় লাগবে’।

জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘আমার তো মনে হয় না। আমার বাসার এলাকায় আসেনি। আমি এটা বিশ্বাস করি না। আপনারা এই জিনিসটা সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না।’ আইনজীবী বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি’।

কনিষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব বিভাগ আপনাদের সতর্ক করেছিল। আপনারা উদ্যোগ নিলেন না কেন?’ আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম চলছে। কিন্তু এই সময়ে এসে প্রকোপ বেড়েছে।’

কনিষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘ওই সময় থেকে উদ্যোগ নিয়ে থাকলে প্রকোপ বাড়ছে কেন? আপনাদের উচিত ছিল ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্ক করার পর সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর দরকার ছিল। আমরা রুল দেওয়ার পর আপনাদের (সিটি করপোরেশনের) ঘুম ভাঙলো। তখন কয়েকদিন উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন। এখন সরকার ধমক দিয়েছে তাই চুপ করে গেছেন।’

জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘ওষুধের ব্যাপারে কী করলেন? গত সপ্তাহে বললেন দুই সপ্তাহ লাগবে।’

তখন আইনজীবী বলেন, ‘সরাসরি (ডিপিএম) ওষুধ আনা হবে। টপ লেভেল থেকে এটা তদারকি করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আনা হবে। দু-এক সপ্তাহ লাগতে পারে।’

কনিষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘সবাই জানে অকার্যকর ওষুধ দিচ্ছেন। এখন বলেন, কতদিনের মধ্যে আনতে পারবেন। বাংলাদেশর ভূখণ্ডে কবে নতুন ওষুধ আসবে। আজকে দেখলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিএস’র (উপ-সচিব) স্ত্রী ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করে? নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার স্ত্রী মারা যায়, তারা জেগে ঘুমালে আমরা তো তাদের তুলতে পারব না।’

আগের ওষুধে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল স্বীকার করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আগের ওষুধে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল। তবে সরকার পদক্ষেপ না নিলে প্রকোপ আরও বাড়ত। হতে পারে যে সময় আনা হয়েছিল তখন ওষুধ কার্যকর ছিল।’

এরপর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা তাদের কার্যক্রম তুলে ধরলে কনিষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘আমরা এটা জানাতে বলিনি। আপনাদের কোন কিছু আমরা আমলে নেব না। যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন ওষুধ না আসে।’ এরপর আদেশ দেন আদালত।

গত ২৫ জুলাই ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত সময় দেন হাইকোর্ট।

গত ১৪ জুলাই রাজধানীতে ডেঙ্গু নির্মূল ও ধ্বংসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বাহিত রোগের বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নিতে বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি)। একইসঙ্গে রুল জারি করে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে ডেঙ্গু নিধনে গৃহীত পদক্ষেপের তথ্য জানাতে বলেন আদালত।

পরে ২২ জুলাই দুই সিটি প্রতিবেদনে জানায় জনসচেতনতা কর্মসূচির পাশাপাশি ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আদালত এ প্রতিবেদনে অসন্তুষ্ট হয়ে ২৫ জুলাই দুই সিটির প্রধান দুই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর