দেওয়ান হোল্ডিংসের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 08:29:42

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ‘মহিউদ্দিন টাওয়ার’ নামে বহুতল ভবন নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ দেওয়ান হোল্ডিংস লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করেছে জমির মালিকপক্ষ। এ নিয়ে ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।

অবিরাম চুক্তিভঙ্গের মাধ্যমে ভবনটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় ফেলে রেখেছে দেওয়ান হোল্ডিংস। ফলে গত পাঁচ বছরেও ভবনের ফ্ল্যাট বুঝে পায়নি মালিকপক্ষ।

জমির মালিকপক্ষের অভিযোগ, দেওয়ান হোল্ডিংস লিমিটেড একটি ভুঁইফোড় কোম্পানি। এটি রিহ্যাব সদস্যভুক্ত কোন কোম্পানি নয়।

উত্তর বাড্ডার ছ-৬৮ নম্বর বাড়ির ১১ কাঠা জমির মালিক পৈত্রিক সূত্রে তিন ভাই খন্দকার মাহবুব আলী, খন্দকার মনোয়ার আলী, খন্দকার মোসাদ্দেক আলী ও তাদের বোন জিনাত আরা বেগম। এ জমিতে ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের জন্য ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর ৫৬/১ পুরানা পল্টনের দেওয়ান হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মো. আবদুস সাত্তারের সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন তারা।

এরপর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ঢিমেতালে নির্মাণ কাজ চলায় চুক্তি মোতাবেক সাড়ে তিন বছরে ভবন নির্মাণে ব্যর্থ হয় দেওয়ান হোল্ডিংস। পরে এক বছর দশ মাস সময় বাড়িয়ে দেয় জমির মালিকপক্ষ। তারপরেও নির্মাণ কাজ শেষ করতে না পারায় দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালের ১২ মে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এ সময়েও ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি কোম্পানিটি।

মালিকপক্ষের অভিযোগ দেওয়ান হোল্ডিংসের অদক্ষতা ও অবহেলায় দশম তলার ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও রাজউক থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে মাত্র ৭ তলা নির্মাণের। তা সত্ত্বেও কোম্পানিটি অবৈধভাবে অষ্টম তলায় স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ভবনে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করেছে মালিকপক্ষ।

তাদের অভিযোগ, জমির মালিকপক্ষকে ১৮টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করার শর্ত থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬টি। বাকি ১২টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়নি। অন্যদিকে ডেভেলপার কোম্পানি তাদের প্রাপ্য ১৮ ফ্ল্যাটের ১৬টি এরইমধ্যে বিক্রি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী জমির মালিকপক্ষের ফ্ল্যাট হস্তান্তরে বিলম্বজনিত কারণে ৪৩ লাখ টাকা ভাড়া দিতেও গড়িমসি করছে।

চুক্তিমতে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে সালিশি আদালতে যাওয়ার শর্ত রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করায় এবং পাওনা ৪৩ লাখ টাকা বার বার চাইলেও কর্ণপাত করেননি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান সাত্তার।

শেষ পর্যন্ত গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সালিশি আইন ২০০১ এর অধীনে ঢাকার জেলা জজ আদালতে মামলা করেন জমির মালিক খন্দকার মাহবুব আলীসহ চারজন। ২০ ফেব্রুয়ারি আদালত দেওয়ান আবদুস সাত্তার ও তার স্ত্রীকে ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন।

নোটিশের জবাব না দেওয়ায় আদালত মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পরে গত ১৩ মে জেলা জজ আদালত ভবনের কোন ফ্ল্যাট বা অংশ অন্যত্র কোনভাবে যেন হস্তান্তর না করতে পারে এ জন্য উভয়পক্ষের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (স্থিতাবস্থা) নির্দেশ দেন। এ স্থিতাবস্থা মেয়াদ বাড়ানোয় তা এখনও বলবত রয়েছে। আগামী ২৬ আগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

সালিশি আদালতে মামলা দায়ের করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দেওয়ান সাত্তার। তিনি হুমকি-ধামকি দিলে জমির মালিক খন্দকার মনোয়ার আলী বাড্ডা থানায় দেওয়ান সাত্তারের বিরুদ্ধে জিডি করেন। জিডির পরেও হুমকি অব্যাহত থাকায় জমির অপর অংশীদার খন্দকার মাহবুব আলীর ছেলে খন্দকার মাহফুজ আহমেদ বাদী হয়ে দেওয়ান সাত্তার, তার সাইট ম্যানেজার মো. আতিকুর রহমান (সবুজ) ও মো. রেজাউল করিমের (রেজা) বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আর হুমকি দেওয়া হবে না এমন মুচলেকা দিয়ে অব্যাহতি পান দেওয়ান সাত্তার ও অন্যরা।

খন্দকার মাহবুব আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে ভবনের কাজ শেষ করতে পারেনি দেওয়ান হোল্ডিংস। দুই দফায় সময় বাড়ানোর পরেও ভবনটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা চাই তারা দ্রুত নির্মাণ শেষ করে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করুক। ভাড়া বাবদ আমাদের পাওনা ৪৩ লাখ টাকা দিতে হবে। আর ভবনের প্রয়োজনে গুণগতমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের যন্ত্র প্রকৌশল শাখায় চাকরি করতেন দেওয়ান আবদুস সাত্তার। ২০১০ সালে অবসরের পর তিনি ডেভেলপার কোম্পানি দেওয়ান হোল্ডিংস প্রতিষ্ঠান করেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান দেওয়ান আবদুস সাত্তারের স্ত্রী।

যথাসময়ে নির্মাণ কাজ শেষ না করা প্রসঙ্গে দেওয়ান আবদুস সাত্তার বলেন, আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেছেন, তাই কাজ করতে পারছি না।

স্থিতাবস্থা গত ১৬ মে জারি হয়েছে, গত ৫ বছরে কেন কাজ শেষ হয়নি তার সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে স্বীকার করেছেন, নানাবিধ সমস্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে ভবনের কাজ শেষ করা যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর