ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ২ সিটির দক্ষতার অভাব দেখছেন হাইকোর্ট

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 17:31:23

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এটা নিলে হয়তো পরিস্থিতি এমন হতো না। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। তারা (সিটি করপোরেশন) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে জনগণের ওপর দায় চাপাচ্ছে। জনগণকে তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। জনগণকে সচেতন হতে হবে-এটা ঠিক। কিন্তু সব দায় জনগণের এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

রোববার (১৮ আগস্ট) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম প্রতিবেদন আকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবহিত করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সকল সরকারি হাসপাতালে ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানিতে শুল্ক মুক্ত করা হয়েছে। ১০টি সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে ৪০টি হাসপাতালে ভ্রাম্যম্যাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। যেসব হাসপাতাল সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছে তাদের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ 

আরও পড়ুন: সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে: ড. কামাল

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম। 

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা গেছে তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় দুইরকম তথ্য দেখছি। সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৪৮ জন। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৭২জন। এটা নিয়ে দুইরকম তথ্য কেন?’

জবাবে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘সরকারি হিসাবে ৪৮ জন। যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তাদের কারও কারও অন্য রোগ থাকতে পারে। কারও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।’

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু প্রতিরোধ: সচেতনতার সাথে প্রয়োজন সঠিক পদক্ষেপ

এ সময় আদালত বলেন, ‘ধরে নিচ্ছি, ৪৮ জনই মারা গেছে। যারা মারা গেছে তাদের পরিবারের কি অবস্থা তা একবার ভেবে দেখুন। ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যথাসময়ে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে হয়তো এত লোককে মরতে হতো না। গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা সতর্ক করেছিলাম। দুই সিটির সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের আদেশের পর দুই সিটির কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে যে ধরনের কথাবার্তা শুনলাম তা কারও কাম্য নয়। ডেঙ্গু মশার লার্ভা ও ডিম থাকে পানিতে। উনারা সেটা পরিষ্কার না করে রাস্তায় ময়লা ফেলে পরিষ্কার করলেন। এটা নেহায়েতই হাস্যকর।’ 

আদালত আরও বলেন, ‘কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বছরের পর বছর একই ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। অথচ ওই ওষুধে কাজ হচ্ছে না। একটি ওষুধ বারবার ব্যবহার করলে তা সহনীয় হয়ে যায়। এটা বুঝতে হবে। দেখুন না, এখন অ্যারোসল আর ঠিকমতো কাজ করে না। এ সময় একজন আইনজীবী বলেন, ‘অ্যারোসলে মশা মরে না।’

আরও পড়ুন: ‘ডেঙ্গু মশা একটু অ্যারিস্টোক্রেটিক হয়ে গেছে!’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে গেলে আদালত বলেন, ‘আমরাতো কোনো রুল জারি করিনি। আরেকটি বেঞ্চ রুল জারি করেছে। সেখানে প্রতিবেদন জমা দিন।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘এই আদালত মৌখিকভাবে এক আদেশে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ জানতে চেয়েছিলেন। তাই সরকার বিষয়টি জানিয়েছে।’ 

আদালত বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা কোনো আদেশ দিচ্ছি না।’  

এ সম্পর্কিত আরও খবর