কারা হেফাজতে আইনজীবীর মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মের চিত্র

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-29 18:23:25

পঞ্চগড়ের কারা হেফাজতে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে এসেছে। কারাগার তত্ত্বাবধানে জেল সুপার থাকার নিয়ম থাকলেও ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কাজ চালানো, নিষিদ্ধ গ্যাস লাইটের অহরহ ব্যবহার, যাচাই ছাড়াই খাবার প্রবেশ করানো হতো। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির রক্ষণাবেক্ষণ করে, কারা অভ্যন্তরের মেডিকেল স্টোর। সেখানে ওই আইনজীবীর অবাধ যাতায়াত ছিল।

ঘটনার দিন সহজলভ্যতার দরুন গ্যাস লাইটার থেকে গায়ে আগুন দেন আইনজীবী পলাশ। তাকে বাঁচাতে গাফিলতি ছিল কারাগার সংশ্লিষ্টদের। হাসপাতালে ভর্তি করতে দাফতরিক আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতেই লেগে যায় ২৪ ঘণ্টা।

এতে বিস্ময় প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, 'তাৎক্ষণিক অগ্নিদগ্ধ আইনজীবীকে হাসপাতালে নেওয়া উচিত ছিল। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা যেত। সেখানে ভর্তির জন্য দাফতরিক আনুষ্ঠানিকতায় চলে গেল ২৪ ঘণ্টা।'

এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজি প্রিজনকে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (২১ আগস্ট) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মোহাম্মদ বদরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ৬ মে আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করেন। ওই রিটে শুনানি শেষে পঞ্চগড়ে কারা হেফাজতে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনার বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আদেশে বলা হয়, পঞ্চগড়ের মুখ্য বিচারিক হাকিমের তত্ত্বাবধানে ঘটনার বিচারিক তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পাশাপাশি এ অনুসন্ধান কাজে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক, জেলা সুপার ও জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত।

আগেরদিন কারাগারে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়কে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ মার্চ দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনশন শুরু করেন আইনজীবী পলাশ কুমার রায়।

রাস্তা বন্ধ করে হ্যান্ডমাইকে মানববন্ধন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি, প্রশাসন ও পুলিশ সম্পর্কে অশালীন বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয়রা তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন। ওইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে রাজিব রানা নামের একজন তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। এরপর সেদিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে ঢাকা পাঠানোর কথা ছিল আইনজীবী পলাশকে। কিন্তু ওইদিন সকালে হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে থাকা একটি টয়লেট থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দৌড়ে বের হন তিনি। এ সময় কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে এবং শরীরের আগুন নেভান। আগুনে তার শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে যায়। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর