স্কয়ারে ভুল চিকিৎসা: ঢাবি ছাত্রকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণে রুল

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-22 13:13:45

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় পঙ্গু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)  শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান শামীমকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

তাকে কেন ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না এবং বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি, স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তার কৃষ্ণা প্রভু ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সাতজনকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

স্কয়ার হাসপাতালকে মেহেদি হাসান শামীমের চিকিৎসার যাবতীয় নথি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলেছেন আদালত ।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ক্ষতিপূরণ চেয়ে মেহেদি হাসান শামীমের করা রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া ও ফুয়াদ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক।

এর আগে গত ১৪ জুলাই পঙ্গু মেহেদি হাসান শামীমের পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করা হয়।

রিট আবেদনে মেহেদি হাসান শামীমকে নিয়ে “ভুল চিকিৎসায় পঙ্গু ঢাবি ছাত্র ক্ষতিপূরণ দাবি” শিরোনামে গত ১৯ এপ্রিল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করে শামীম জানান, সামান্য শারীরিক সমস্যা নিয়ে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি স্কয়ার হাসপাতালে ডা. কৃষ্ণা প্রভুর কাছে যান। ওই সময় চিকিৎসক বলেন, তার মস্তিষ্কের রক্তনালিতে টিউমার বা ইনসুলার ক্যাভারনোমা হয়েছে। দ্রুত অপারেশন না করলে যে কোনো সময় তিনি স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন। ওই সময় কৃষ্ণা প্রভু নিজেকে সিএমসি ভেলোরের সিনিয়র কনসালটেন্ট দাবি করে বলেন, এ সমস্যা সামান্য, এ জন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। তিনি সহজেই এই অপারেশন করতে পারবেন।

সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে না জানিয়েই গত ২৩ জানুয়ারি স্কয়ার হাসপাতালে ওই অপারেশন হয়। তিনি বলেন, অপারেশনের পর আইসিইউতে থাকাবস্থায় আমার ছোট ভাইকে আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। ২৫ তারিখে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আমার শরীরের বাম পাশ আর কাজ করছে না। উন্নত চিকিৎসার সুবিধার্থে চিকিৎসকের কাছে আমার অপারেশনের সিডি চাইলে তিনি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দিতে টালবাহানা শুরু করে। এ নিয়ে ১ এপ্রিল স্কয়ার হাসপাতালের সিইও ইউসুফ সিদ্দিকীর কাছে অপারেশনের সিডির জন্য গেলে গোঁজামিল হিসাব দেন। পরে ৭ এপ্রিল সিইও বরাবর আমার অপারেশন সিডি ও রোগীর ফাইল চেয়ে লিখিত আবেদন করি। কিন্তু তারা আবেদন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান।

‘গত ১৫ এপ্রিল চিকিৎসক কৃষ্ণা প্রভুর সঙ্গে দেখা করলে তিনি জানান, অপারেশনের সময় আমার মস্তিষ্কের কয়েকটি নার্ভ কাটা গেছে। এ সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি আমাকে থাইল্যান্ড অথবা সিঙ্গাপুর যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অপারেশনের আগে এই ঝুঁকি সম্পর্কে জানাননি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, তার কারণেই নাকি আমি পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছি। অন্য কেউ অপারেশন করলে আমি মরেও যেতে পারতাম,’- বলেন শামীম।

শামীম জানান, চিকিৎসাবাবদ এ পর্যন্ত তার ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফলে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন মেহেদি হাসান শামীম।

মেহেদি হাসান শামীম ঢাবির উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর