খুনের মামলার ‘ভিকটিম’ রিমান্ড শেষে কারাগারে

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 13:10:34

পাঁচ বছর আগের একটি খুনের মামলার ‘ভিকটিম’ আবু সাঈদকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) হাজারীবাগ থানার এসআই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লন্ডন চৌধুরী তাকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

২০১৪ সালে জনৈক আজম তার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আবু সাঈদ (১০) হারিয়ে যায় মর্মে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় একটি জিডি করেন। ছেলেকে পাননি উল্লেখ করে পরবর্তীতে তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণের একটি মামলা দায়ের করেন।

আজম বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের বাসিন্দা। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তিনি রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন বটতলা মাজার রোডে বসবাস করতেন।

এ মামলায় ৬ মাস জেলখাটা আসামি সোনিয়া আক্তার (২৫) সাংবাদিকদের জানান, ভিকটিম আবু সাঈদকে তারা চেনেন না। অথচ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের তৎকালীন এসআই মো. রুহুল আমিন তাকে, তার ভাই আফজাল, বাবা এবং এক প্রতিবেশী সাইফুলকে এক সঙ্গে গ্রামের বাড়ি থেকে ধরে আনেন। এরপর ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে প্রায় ৮ দিন আটক রেখে স্বীকারোক্তি করানোর জন্য বাবার সামনে তাদের নির্যাতন করা হয়। হত্যার কথা স্বীকার না করলে তার বাবাকে এ মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়।

তাদের দাবি অকথ্য নির্যাতন সইতে না পেরে ও বাবাকে বাঁচাতে পুলিশের শেখানো মতে তারা খুনের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

এ মামলায় বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয়, আসগর আলী, মিলন, মো. সাইফুল ইসলাম হাওলাদার, সোনিয়া আক্তার, আফজাল হোসেন ও মো. শাহীনকে। তারা কেউ ছয়মাস কেউ দুই বছর ও কেউ তিন বছর জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেয়ে গত পাঁচ বছর মামলা লড়ছেন।

২০১৫ সালের ১৫ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন। চার্জশিট থেকে আসগর আলী ও মিলনকে বাদ দিয়ে অপর চারজনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তিতর্ক শেষেই সাধারণত রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

সোনিয়া জানান, মামলার এ পর্যায়ে আসামিরা লোকমুখে জানতে পারেন ভিকটিম আবু সাঈদ বেঁচে আছে। কিন্তু আবু সাঈদের ঠিকানা জানা যাচ্ছিল না। তারা মামলার বাদী আজমের সঙ্গে আপস মীমাংসার ফাঁদ পাতেন। বাদীকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

ঢাকার পল্লবী থানাধীন এক বাসায় ভিকটিম আবু সাঈদকে এনে কাগজে স্বাক্ষর করে আরও ২ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। এত টাকার লোভ সামলাতে পারেননি বাদী আজম। গত ২৯ আগস্ট রাতে তিনি ভিকটিম আবু সাঈদ, তার স্ত্রী মাহিনুর বেগম ও বোনের জামাই আব্দুল জব্বারকে নিয়ে ঢাকা আসলে তাদের পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের নামে প্রতারণার মামলা করা হয়।

জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের বিষয়টি জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন মোবাইল ফোনে জানান, জোর করে বা নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়নি। আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা দোষ স্বীকার করেন এবং আদালতেও একইভাবে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর