সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন। বিশেষ করে রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পর মোটরসাইকেল বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যামিতিক হারে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনাও। ডিএমপির ওয়েবসাইট অনুসারে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মামলা দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে। আর এ সব মামলা থেকে প্রতিদিন গড়ে আদায় করা হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
আসলে মোটরযান আইন কি? গাড়ি রাস্তায় বের করার পর কী করা যাবে, কী করা যাবে না। কি কি নিয়ম মানতে হবে তা আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানি না।
যানবাহন রাস্তায় নামানোর আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিসমূহ সবার জানা উচিত। মোটরযান আইন ১৯৮৩ অনুযায়ী কোন অপরাধে কি শাস্তির বা জরিমানার সম্মুখীন হবেন তা আইনের দশম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের পাঠকদের জন্য তা তুলো ধরা হলো-
১৩৭ ধারা:
যে সকল অপরাধের জন্য মোটরযান আইনে সুনির্দিষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা নেই। সেক্ষেত্রে ২০০ টাকা জরিমানা, অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে তা ৪০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
১৩৮ ধারা:
লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ চার মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
১৩৯ ধারা:
নিষিদ্ধ হর্ন কিংবা শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্র সংযোজন বা ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা জরিমানা হতে পারে।
১৪০(১) ধারা:
আদেশ অমান্য, বাধা সৃষ্টি ও তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে ৪০০ টাকা জরিমানা।
১৪০(২) ধারা:
ওয়ানওয়ে সড়কের বিপরীত দিকে গাড়ি চালানো ২০০ টাকা জরিমানা।
১৪১(১) ধারা:
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার অযোগ্য হওয়ার কথা গোপন রেখে পুনরায় ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করলে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
১৪১(৩) ধারা:
কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স চাহিবামাত্র প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলে ৫০ টাকা জরিমানা হতে করা হতে পারে।
১৪২ ধারা:
দ্রুতগতিতে গাড়ি চালালে প্রথমবার একমাস কারাদণ্ড অথবা ৩০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড হতে পারে। পরবর্তী এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং একমাসের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হতে পারে।
১৪৩ ধারা:
বেপরোয়াভাবে কিংবা বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালালে প্রথমবার অপরাধের জন্য ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০০ টাকা জরিমানা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সাসপেন্ড থাকবে।
১৪৪ ধারা:
মদ্যপান কিংবা মাদকদ্রব্য সেবনের পর মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালালে প্রথমবার সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
১৪৫ ধারা:
শারীরিক কিংবা দৈহিকভাবে অনুপযুক্ত অবস্থায় গাড়ি চালালে প্রথমবার সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা এবং তার ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাতিল থাকবে।
১৪৬ ধারা:
দুর্ঘটনা সংক্রান্ত যে সকল অপরাধে থানায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা জরিমানা এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদণ্ড হতে পারে।
১৪৮ ধারা:
মোটরগাড়ির দৌড়বাজি অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ একমাস কারাদণ্ড অথবা ৫০০ টাকা জরিমানা এবং তার লাইসেন্স এক বছরের জন্য সাসপেন্ড করা যাবে।
১৪৯ ধারা:
নিরাপত্তাবিহীন অবস্থায় গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ একমাস কারাদণ্ড অথবা ২৫০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। পরবর্তী অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদণ্ড অথবা ১ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
১৫০ ধারা:
স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে এমন ধোঁয়া বের হওয়া মোটরযান চালালে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা হতে পারে।
১৫২ ধারা:
রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট অথবা পারমিট ব্যতীত মোটরযান চালালে প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বাধিক ৩ মাস কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিংবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
১৫৪ ধারা:
অননুমোদিত ওজন অতিক্রমপূর্বক গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
১৫৫ ধারা:
বিমা ছাড়া মোটরযান চালালে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
১৫৭ ধারা:
প্রকাশ্য সড়কে অথবা প্রকাশ্য স্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা অথবা মোটরযান কিংবা খুচরা যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
১৬০ ধারা:
ইউনিফর্মধারী পুলিশ অফিসারের সামনে কেউ ৩২, ৫১, ১৪৩, ১৪৪, ১৪৫, ১৪৬, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৫৪ কিংবা ১৫৬ ধারার অপরাধ করলে তিনি বিনা ওয়ারেন্ট গ্রেফতার করার ক্ষমতা রাখেন।