যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-06-15 01:55:13

দুই যুগ আগে যশোরের কেশবপুর উপজেলার মহাদেবপুরে গ্রামের আব্দুস সামাদ হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির জামিন বাতিল করে তাদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব নাথ। বাদী পক্ষের ছিলেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান রুবেল। আসামিদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন।

১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার সময় যশোর জেলার কেশবপুরের মহাদেবপুর গ্রামের মো. নজর আলী শেখের ছেলে আব্দুস সামাদের ঘরে অস্ত্রসহ একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে এবং সামাদকে ঘর থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সামাদকে মমিনপুর রেজিস্ট্রার বেসরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন তার বাবা। এ সময় তার উভয় পায়ের হাঁটুর নিচে কাটা, রক্তাক্ত জখম এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা ২০মিনিটে মৃত্যু হয়।

এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি সামাদের বাবা বাদি হয়ে সাতজনকে আসামি করে কেশবপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৬ সালের ২৩ জানুয়ারি ১২ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে।

আসামিরা হলেন-রফিক ওরফে রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, দ্বীন মোহাম্মাদ ওরপে দ্বীনু ওরফে মিন্টু, শাহাদাৎ ওরফে মেঝ, রাজ্জাক, তোরাপ, জাকির হোসেন, সোহরাব হোসেন, রাজ্জাক কাগুচি, রফিক এবং আমজাদ হোসেন। তবে মামলা চলাকালে আসামি আমজাদের মৃত্যুর কারণে তার নাম বাদ পড়ে।

মামলার পর এজাহারভুক্ত আসামি আলতাফ ও রফিকুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তারা ৯ মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হন। এছাড়াও পরবর্তীতে আসামি রাজ্জাক, সোহরাব, জাকির এবং তোরাব জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান। তবে এরপর থেকে আসামি আলতাফ, রফিকুল, রাজ্জাক, সোহরাব, জাকির এবং তোরাবকে আর জেল খাটতে হয়নি। পাশাপাশি আলতাফ কারাগারে থাকাবস্থায় মারা যায়।

মামলাটি যশোরের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হলেও পরবর্তীতে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট অভিযুক্ত ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। একই সঙ্গে মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার ঘটনায় প্রত্যেক আসামিকে ১০ বছরের সাজা ও জরিমানা দেওয়া হয়।

পরে একই বছর রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করে আসামি রফিকুল, রাজ্জাক, সোহরাব, জাকির এবং তোরাব আপিল শুনানি চলাকালে ২০১৬ সালে হাইকোর্ট থেকে জালিয়াতি করে জামিন নেয়। জামিনের নথিতে তারা ৯ মাস জেলে থাকার তথ্য ৯ বছর দেখান। পরে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আসামিদের জামিন স্থগিত করে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

আপিলের আদেশের পর আসামিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। এরপর দীর্ঘ ২ বছর ৫ মাস কারাভোগের পর আসামিরা পুনরায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানায় এবং চলতি বছরের ১৫ মে জামিন পেয়ে তারা কারামুক্তি পান। তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল দায়ের করে। যার ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৪ অক্টোবর) আপিল বিভাগের শুনানি শেষে পাঁচ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর