ফেরির অপেক্ষায় তিতাসের মৃত্যু: 'দায় এড়াতে পারেন না যুগ্ম-সচিব'

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 22:24:53

মাদারীপুরের ফেরিঘাটে যুগ্ম-সচিবের জন্য ফেরি আটকে রাখায় স্কুল ছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় কাঁঠালবাড়ি এক নম্বর ফেরিঘাটের চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরাসরি দায়ী করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এছাড়া এটুআই প্রকল্পের কর্মরত যুগ্ম-সচিব আবদুস সবুর মণ্ডলের বিষয়ে বলা হয়েছে 'এ ঘটনায় তিনি দায় এড়াতে পারেন না'।

হাইকোর্টের নির্দেশে বুধবার (৬ নভেম্বর) দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির সভাপতি সঞ্জয় কুমার বণিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এটি জমা দেন।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হবে।

প্রতিবেদনে সরাসরি যে চারজনকে দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন- ঘাট ম্যানেজার মো. সালাম হোসেন, প্রান্তিক সহকারী মো. খোকন মিয়া, উচ্চমান সহকারী ও গ্রুপ প্রধান ফিরোজ আলম এবং ইনল্যান্ড মাস্টার সামছুল আলম।

গত ২৩ অক্টোবর তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। ৭ নভেম্বরের মধ্যে এই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

গত ২৫ জুলাই রাতে সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব ও চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মণ্ডলের গাড়ির অপেক্ষায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি এক নম্বর ফেরিঘাটে প্রায় দুই ঘণ্টা 'কুমিল্লা ফেরি' বসিয়ে রাখা হয়। অ্যাম্বুলেন্সে থাকা স্কুল ছাত্র তিতাস ঘোষকে পার করার জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হলেও ফেরি ছাড়া যায়নি। ফলে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় তিতাসের।

এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে তিতাসের পরিবারকে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ৩১ জুলাই তিতাসের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে পদমর্যাদায় অতিরিক্ত সচিবের নিচে নয় এমন একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত করতে বলেন আদালত। তার আগেই ৩০ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রতিবেদন গত ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।

ওই প্রতিবেদনে দেরিতে ফেরি ছাড়ার জন্য দায়িত্বরত ফেরি ঘাটের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করে তদন্ত কমিটি। তদন্তে নির্দোষ বলা হয় যুগ্ম-সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডলকে।

তবে ওই যুগ্ম-সচিবের জন্য দুই ঘণ্টা ফেরি দাঁড় করিয়ে রাখার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স/গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা গ্রহণসহ সাত দফা সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে যে তিনজনকে দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন- ঘাট ম্যানেজার মো. সালাম হোসেন, প্রান্তিক সহকারী মো. খোকন মিয়া এবং উচ্চমান সহকারী ও গ্রুপ প্রধান ফিরোজ আলম। তাদের কাজে অবহেলা, ঘাট ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিপত্র লঙ্ঘন করে বিলম্বে ফেরি ছাড়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর