গতি নেই তাজরীন গার্মেন্টস অগ্নিকাণ্ড মামলার

, আইন-আদালত

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 10:32:54

দেশের ইতিহাসের অন্যতম আগুন ট্র্যাজিডি ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টসের অগ্নিকাণ্ড। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে ১১৩ জন শ্রমিকের প্রাণহানি হলেও মামলার কোনো গতি নেই।

চার্জশিটভুক্ত ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৮ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। চলতি বছরের ৭ মার্চ আবির নামে এক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এরপর আর কোনো সাক্ষ্য হয়নি।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১৩ জন শ্রমিক জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন শতাধিক শ্রমিক।

ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শরীফ এ এম্ রেজা জাকেরের আদালতে মামলাটির বিচার কাজ চলছে।

২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাজরীন ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক একেএম মহশীন উজ্জামান খাঁন।

চার্জশিটভুক্ত ১৩ আসামি হলেন, তাজরীনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, কোয়ালিটি ম্যানেজার শহিদুজ্জামান দুলাল, প্রডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনারুল, স্টোর ইনচার্জ আল আমিন ও লোডার শামীম মিয়া।

১৩ জন আসামির মধ্যে ১১ জনই জামিন পান। জামিনে গিয়ে দুই আসামি লোডার শামীম মিয়া ও সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনারুল পলাতক হন। অপর দুই আসামি কোয়ালিটি ম্যানেজার শহিদুজ্জামান দুলাল ও প্রডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চার্জশিট গঠনের মধ্য দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ৩ বছর পর আসামিদের বিচার শুরু হয়।

সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) রেহানা আক্তার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সাক্ষীদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে সমন ও ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাদের আদালতে হাজির করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই।

তিনি আরও বলেন, মামলার সাক্ষীদের অধিকাংশই গার্মেন্টস শ্রমিক। তারা এক গার্মেন্টসে স্থায়ীভাবে কাজ করে না। তাই হয়তো সমন তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছে না। আর তাদের আপডেট ফোন নাম্বারও আমাদের কাছে নেই।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ১১১ জন শ্রমিক জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন ১০৪ জন শ্রমিক। গার্মেন্টসটিতে এক হাজার ১৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি ৫৩ জনের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ভবনটির নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমনের পথ না থাকায় এবং আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা আগুনটিকে অগ্নি নির্বাপণ মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর