হলি আর্টিজান হামলা: বিদেশি নাগরিকরাই লক্ষ্য ছিল

, আইন-আদালত

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-25 03:40:03

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে (স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ) হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই হামলায় ২৪ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে তারা। নিহতের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি, তিন জন বাংলাদেশি অতিথি, দু’জন রেস্তোরাঁর কর্মচারী ও দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। ঘটনার সাত দিন পর আহত আরও একজন মারা যান।

নিহত বিদেশিদের মধ্যে নয়জন ইতালি, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয় ছিলেন। ওই ঘটনায় যৌথবাহিনী অভিযান চালালে পাঁচ জঙ্গিও নিহত হন।

আসামিদের জবানবন্দি, মামলার চার্জশিট প্রভৃতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে। ২০০১ সালে আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে জেএমবি সংগঠনটি গড়ে ওঠে। ২০০৪ সালে বাংলাভাই, আতাউর রহমানের নেতৃত্বে সর্বহারা নিধনযজ্ঞ শুরু হলে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে। এ পরিস্থিতিতে ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা করে নিজেদের শক্তি জানান দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই, আব্দুল আউয়াল, আতাউর রহমান সানীসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।

এরপর মাওলানা সাইদুর রহমান জেএমবির আমির হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১০ সালের সাইদুর রহমানও গ্রেফতার হন। তখন ডাক্তার নজরুল অঘোষিত নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকে।

২০১৩ সালের শেষের দিকে নেতৃত্বের কোন্দলে সারোয়ার জাহানের নির্দেশে ডা. নজরুলকে দিনাজপুরে হত্যা করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে সারোয়ার জাহানের নির্দেশে জেএমবির একটি দল ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন, হাফেজ মাহমুদ ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে ছিনিয়ে নিয়ে জেএমবিকে আরও শক্তিশালী করতে চেষ্টা করে।

জেএমবির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর ও মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেফতার হলে তারা হিংস্র হয়ে ওঠে। ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে তারা উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাজক, পুরোহিত, মাজারের খাদেম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করতে শুরু করে। এভাবে তারা বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু বিদেশিদের টনক নড়াতে তারা ব্যর্থ হয়।

২০১৫ সালের মে মাসের দিকে তামিম আহমেদ চৌধুরী জেএমবির একাংশের নেতৃত্বে আসেন। তার সঙ্গে যোগ দেন সারোয়ার জাহান, মামুনুর রশীদ রিপন ও অন্যান্যরা। তারা সংগঠনের শক্তি বাড়াতে সচেষ্ট হয়। ওই বছরের অক্টোবর মাসে তারা সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। নতুন সদস্যদের মিরপুরের কয়েকটি ভাড়া বাসায় রেখে ট্রেনিং করানো হয়।

হলি আর্টিজানে হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী মীর সামেহ্ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলকে মিরপুরের বউবাজারের মধ্য পাইকপাড়ার একটি বাসায় ট্রেনিং দেওয়া হয়।

তামিম-সারোয়ার মিলে দেশে বড় ধরনের একটি হামলার পরিকল্পনা করেন। যাতে একই সঙ্গে বেশিসংখ্যক বিদেশি হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করানো যায়। উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে বয়কট করে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম সারওয়ার খান (জাকির) বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি বাংলাদেশের সংহতি জননিরাপত্তা বিপন্ন ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে ১৭ জন বিদেশিসহ ২৪ জনকে হত্যা করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর