হামলার জন্য হলি আর্টিজান বেছে নেয়ার কারণ

, আইন-আদালত

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-28 07:56:47

নব্য জেএমবি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়। আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তারা একটি বড় হামলার পরিকল্পনা করে।

২০১৬ সালের মার্চ মাসে তামিম আহমেদ চৌধুরী ও শরিফুল ইসলাম খালেদ কল্যাণপুরে আসলাম হোসেনের ভাড়া বাসায় আসে। তারা রমজান মাসে কুটনৈতিক এলাকায় হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। এসময় আসলাম তামিমকে জিজ্ঞাসা করেন হামলা কূটনৈতিক এলাকায় কেন? জবাবে তামিম বলেন, নব্য জেএমবি সংগঠনটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত। আইএস’র দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কুটনৈতিক এলাকায় হামলা প্রয়োজন।

মামলার চার্জশিট ও আসামি আসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে বিষয়টি জানা যায়।

হলি আর্টিজান কয়েক স্তরে হামলার পরিকল্পনা হয়। হামলার মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তামিম চৌধুরী। হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল এক সাথে বেশিসংখ্যক বিদেশি হত্যা করা।

হামলার স্থান নির্ধারণে তামিম চৌধুরীর নির্দেশে আসলাম গুলশান পার্ক রেকি করেন। গুলশান পার্ক রেকি করার পর আসলাম দেখতে পায় যে, বিকাল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে পার্কে ২৫/৩০ জন বিদেশি ব্যায়াম করতে আসেন। এরপর আসলাম ২ দিন হলি আর্টিজান বেকারি রেকি করেন। সন্ধ্য ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে সে সব সময়ই ৮/১০জন বিদেশিকে পাওয়া যায়। রেকির ফলাফল তিনি তামিম চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম মারজানকে অবহিত করেন।

এবার তামিম দলের ইশতিহাদি (আত্মঘাতি) ৫ সদস্যকে নিয়ে মারজান, রাজীব গান্ধী ও বাশারুজ্জামান চকলেটকে নির্দেশ দেন। তারা গুলশান এলাকার হলি আর্টিজান বেকারি, গুলশান পার্ক, লেডিস ক্লাব, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা পার্ক, বনানী কফি শপসহ প্রভৃতি স্থান রেকি করে। পরে তারা তামিম চৌধুরীর সাথে মিলিত হয়ে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

হামলার দুইদিন আগে ২০১৬ সালের ২৯ জুন তামিম চৌধুরীর নির্দেশে তারা ফের স্থানগুলো রেকি করেন।

এরপর তারা রেকির ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, লেডিস ক্লাব, গুলশান পার্ক, বারিধারায় বিদেশি নাগরিক যাতায়াত করলেও তা সংখ্যায় কম। এছাড়া সেখানে একজন একজন করে টার্গেট করাও অসুবিধায়। সেক্ষেত্রে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি অনেক সুবিধাজনক।  আলোচনা শেষে তারা হলি আর্টিজানকেই লক্ষ্যবস্তু হিসাবে নির্ধারণ করেন।

হলি আর্টিজান রাজধানীর কুটনৈতিক এলাকা গুলশান -২ এর ৭৯ নম্বর রোডের শেষ মাথায় গুলশান লেকের গা ঘেঁষে ১৬ কাঠা জমির উপর এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।

হলি আর্টিজান একটি দোতলা ভবন। এর নীচতলায় একটি হল রুম, একটি কিচেন, একটি বেকারির শো-রুম, একটি কমন টয়লেট, একটি সার্ভেন্ট টয়লেট, একটি কুল রুম (চিলাররুম) এবং দ্বিতীয় তলায় একটি হল রুম ও তিনটি স্টোর রুমবিশিষ্ট।

ভবনটির পেছন দিকে জেনারেটর রুম, ওভেন জেনারেটর রুম এবং একটি পিজা ঘর বর্তমান। গুলশান লেকপাড়ের গাঁ ঘেষে একটি টালিঘর অবস্থিত। বিভিন্ন পর্যায়ে ৮৪ জন স্টাফ ওই রেস্তোরাঁয় দায়িত্ব পালন করতেন।

সবুজ ঘাস ও কোলাহলমুক্ত বাগান সদৃশ মনোরম এ রেস্তোরাঁয় আগত অতিথিরা যেখানে খুশি বসে খাবার খেতে পারতেন। বিদেশিসহ আগত উচ্চবিত্ত অভিজাত অতিথিদের পদচারণায় মুখরিত ছিল হলি আর্টিজান। তারা রেস্তোরাঁয় আসতেন কিছু আনন্দঘন সময় কাটাতে। কেউ কখনই ভাবেননি এমন মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এক রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা হতে পারে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই শবে কদরের রাতে আনন্দমুখর এ হলি আর্টিজান ইতিহাসে ভয়াবহতম সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হয়। ওইদিন জঙ্গিদের হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২৪জন নিহত হন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া ৫ জঙ্গি নিহত হয়।

আরও পড়ুন: হলি আর্টিজান হামলা: বিদেশি নাগরিকরাই লক্ষ্য ছিল

এ সম্পর্কিত আরও খবর