গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের হামলা মামলার রায় শোনার পর আল্লাহু আকবর বলে চিৎকার দিয়ে জঙ্গিরা বলেন দ্বীন ইসলামের জয় হোক।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় পড়া শুরু হয়। রায় পড়ার সময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন নৃশংস এ হামলা মামলার ৮ আসামি।
রায় পড়ার সময় জঙ্গিরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে তা শুনেন। এ সময় তাদের চোখে মুখে কিছুটা ভয় বা আতঙ্ক দেখা যায়। কিন্তু রায় ঘোষণার পর আসামিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা নির্দোষ বলে বার বার চিৎকার করতে থাকেন।
হাদিসুর রহমান বলেন , আমি তো ছিলামই না। কোন কিছুই জানি না।
রিগান নামে এক জঙ্গি বলেন, সব ভুয়া, আমি নাকি আইএসের সদস্য। শুনে হাসি পায়।
রায় শেষে এজলাস থেকে বের করে আসামিদের প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছে কারাগারে নেওয়ার জন্য।
এর আগে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা মামলার রায়ে ৭ আসামির ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত ৮ আসামির মধ্যে মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান নামে একজন আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ভয়াবহ ওই হামলা হয়। সেদিন জঙ্গিরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছিলেন ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ওই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। রায়ের আগে চার্জশিটের ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলার আসামিরা হলেন—রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন।
হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। নিহতের মধ্যে ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপানি ও একজন ভারতীয় ছিলেন।
হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। গ্রেনেড হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ নিহত হন।
পরদিন সকালে যৌথ বাহিনী কমান্ডো ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামক অভিযান চালায়। এতে পাঁচ হামলাকারী নিহত হয়। অভিযানে রেস্তঁরার প্রধান শেফ সাইফুল ইসলাম মারা যান। গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রেস্তোরাঁটির সহকারী শেফ জাকির হোসেন।
২০১৬ সালের ৪ জুলাই নিহত ৫ জঙ্গিসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বাকি ১৩ জন মামলা তদন্ত চলাকালীন বিভিন্ন সময় মারা যান।