বিএসএমএমইউতে উন্নত চিকিৎসার সম্মতি দেননি খালেদা

, আইন-আদালত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-15 06:42:46

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট (উন্নত চিকিৎসা) নিতে রাজি হননি কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএসএমএমইউ থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয় বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি)।

এরপর বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হাইকোর্টে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের শুনানি শেষ হয়। এ সময় এ ব্যাপারে রায়ের জন্য দুপুর ২টা সময় নির্ধারণ করেন আদালত। বিএসএমএমইউ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনটি আদালতে পড়ে শোনান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে উন্নত চিকিৎসার সম্মতি দেননি। এ কারণে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানির পর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের আদেশের জন্য দুপুর ২টা সময় নির্ধারণ করেন আদালত।

খালেদার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন।

এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (রোববার) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ রেকর্ড দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার মধ্যে বিএসএমএমইউকে এ রেকর্ড দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে নির্দেশের প্রেক্ষিতে এ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জামিন আবেদনের শুনানির পর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালত আদেশে বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য পূর্বে যে বোর্ড গঠিত হয়েছিল, সে বোর্ডের অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের সুপারিশ অনুসারে খালেদা জিয়া তার চিকিৎসা করাতে সম্মতি দিয়েছেন কিনা। যদি সম্মতি দিয়ে থাকেন তাহলে সুপারিশ অনুসারে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছি কিনা। সম্মতি দিয়ে থাকলে তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা কী, তা জানাতে বলা হয়েছে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্যকে।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন, মো. মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ।

আর দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।

১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) এই আবেদনটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সগীর হোসেন লিয়ন।

এর আগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় তার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তবে আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) যদি সম্মতি দেন তাহলে বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী তার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

ওই সাজা বাতিল চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। শুনানি নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের দেওয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন। এ ছাড়া বিচারিক আদালতে থাকা মামলার নথি তলব করেন হাইকোর্ট।

গত ২০ জুন মামলার নথি হাইকোর্টে আসার পর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা। গত ৩১ জুলাই জামিন আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়া। এ জামিন আবেদনের শুনানিতে গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে জানাতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে মেডিকেল রিপোর্ট ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। ৫ ডিসেম্বর মেডিকেল প্রতিবেদন জমা না পড়ায় শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করেন আদালত।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর