একদম সুস্থ সবল একজন মানুষ জেন টেইলর। কোন রোগবালাই নেই, নেই কোন শারীরিক ব্যথা কিংবা অসুস্থতা। তবে হুট করেই খেয়াল করলেন, কিছুদিন যাবত মুখের ভেতর ছোট পিন্ড (লাম্প) অনুভব করতে পারছেন তিনি। দাঁতের ডাক্তারকে দেখালে তিনি জানালেন, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এই লাম্পটি মুখের ভেতর একটি ফোঁড়া মাত্র!
জেন তখনও জানতেন না, কী অপেক্ষা করছে তার জন্য। খুব সাধারণ একটি মুখের ভেতরের ফোঁড়া, তার জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর অধ্যায়ের সূচনা ঘটায়। পরপর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তাররা তাকে নিশ্চিত করেন, জেন বোন (হাড়) ক্যান্সারে আক্রান্ত।
৩০ বছর বয়সী জেন গত বছরের আগস্টে জানতে পারেন ভয়ানক এই ব্যাধিতে আক্রান্ত তিনি। ক্যান্সার ধরা পড়ার দুই সপ্তাহ পর থেকেই কেমোথেরাপি নেওয়া শুরু করেন জেন। পরপর তিন সপ্তাহ কেমোথেরাপি নেওয়ার পর সময় আসে অস্ত্রোপচারের।
দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে অস্ত্রচিকিৎসক জেনের মুখের উপরের চোয়াল, গাল, চোখের কোটর সহ মাথার খুলির অংশ পর্যন্ত ফেলে দেয় এবং জেনের কাঁধের হাড় বা কন্ধফলক (Shoulder Blade) ও পেশী দিয়ে পুনঃনির্মান করে মুখের ওই অংশটুকু। শুধু তাই নয়, ঘাড়ের শিরা-উপশিরা থেকে রক্ত চলাচল করার প্রক্রিয়াও চালু করে দেয় অস্ত্রচিকিৎসকরা।
বড় ধরণের এই অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবেই জেন কোন কিছু খেতে, পান করতে ও কথা বলতে পারতেন না।
নিজের কিম্ভূতকিমাকার চেহারার দিকে তাকিয়ে প্রায়শ দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন, হতাশ হয়ে পড়তেন জেন। কিন্তু কখনোই হাল ছেড়ে দেননি। সেরে ওঠার এই ক্লান্তিকর সময়ে নিজেকে অনুপ্রাণিত ও আশাবাদী করতে প্রতি সপ্তাহেই নিজের মুখের ছবি তুলতেন তিনি। খুব ধীরে ধীরে নিজের মুখের পরিবর্তন ও সেরে ওঠার ছবি দেখে নিজেকে শক্ত রাখতেন তিনি।
দিনের পর দিন অপেক্ষার পর জেন এখন অনেকটাই সুস্থ। নিজের চেহারা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া সম্ভব হবে না আর কখনোই।
শারীরিকভাবে সুস্থতা লাভের পর নিজের কর্মস্থলেও ফিরে যেতে শুরু করেছে জেন। সাথে চলছে ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্টসের কাজ। অস্ত্রোপচারের কারণে জেনের মুখে এখন আছে মাত্র ছয়টি দাঁত।
এতো কষ্টকর ও ক্লান্তিদায়ক প্রক্রিয়ার পর নিজেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে দেখা অনেক আনন্দের একটি বিষয়। তবে এখনও জেন মন খারাপ করেন নিজের চেহারা দেখে। এখনও তিনি আয়নায় চেহারার মাঝে ‘ক্যান্সার’ এর ছায়া দেখতে পান। এখনও নিজের কাছে স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি নিজের মুখমন্ডল। জেন অপেক্ষা করছেন, একদিন আর সবার মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে নিজের চেহারাও।