আজ ১২ অক্টোবর বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস। আর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত এই বাতরোগ মূলত অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টের প্রদাহ। এটি এক বা একাধিক জয়েন্টকে আক্রান্ত করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি প্রবীণদের মধ্যে দেখা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনের একজন এই রোগে আক্রান্ত। প্রদাহের কারণভেদে এ রোগটিকে সাধারণত ওসটিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডাইলার আর্থ্রোপ্যাথিস, গেঁটেবাত, সংক্রমণজাত আর্থ্রাইটিস, জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি দলে ভাগ করা হয়।
উপসর্গ: আর্থ্রাইটিসে তরুণাস্থি ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। শরীরের যেকোনো হাড়ের জয়েন্টে এ রোগ হতে পারে, তবে ভার বহনকারী জয়েন্টে হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ রোগের উপসর্গ হলো ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে, কোমরে বা মাজায় অসহ্য ব্যথা হওয়া। ঘাড় ঘোরাতে, শরীর বাঁকাতে এবং হাঁটাচলা করতে প্রচণ্ড অসুবিধা হতে পারে। এ ছাড়া হালকা জ্বর, ক্ষুধামান্দ্য এবং ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা হয়।
আর্থ্রাইটিস সম্পর্কিত কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা
বর্ষা ও পূর্ণিমায় ব্যথা বাড়ে: মেডিকেল সায়েন্সে এর কোনো সঠিক প্রমাণ নেই। এটা একটা সম্পূর্ণ ভুল ও বহুল প্রচলিত মিথ। দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কিছুটা কো-ইন্সিডেন্স, কিছুটা মানসিক।
শুধুমাত্র বয়স্কদের আর্থ্রাইটিস হয়: বয়স্কদের মধ্যে আর্থ্রাইটিস বেশি দেখা যায় বটে, কিন্তু এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ২০-৪০ বছর বয়সেই দেখা যায়।
জয়েন্টে ব্যথা মানেই আর্থ্রাইটিস: সমস্ত জয়েন্টের ব্যথা বাত নয়, এবং সমস্ত জয়েন্টের অস্বস্তি মানেই সেটা আসন্ন আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ নয়। টেন্ডিনাইটিস, বার্সাইটিস, ইউরিক অ্যাসিড এবং চোট আঘাতসহ জয়েন্টগুলোতে এবং আশেপাশে ব্যথার অনেক সম্ভাব্য কারণ রয়েছে।
বাতের রোগীদের ব্যায়াম করা উচিত নয়: ব্যায়াম সাধারণত এমন কোন ক্রিয়াকলাপ নয় যা আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলতে হয়। তবে জয়েন্টে খুব চাপ পড়বে এমন ব্যায়াম এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন হেভি ওয়েট ট্রেনিং, দৌড়। বদলে সাইক্লিং, সাঁতার, নূন্যতম ওজন নিয়ে হালকা কসরত, স্ট্রেচিং অত্যন্ত উপকারী। আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের ব্যথা কম থাকে।
একবার হলে আর কমবে না: দ্রুত সম্পূর্ণ সুস্থতা না এলেও অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চিকিৎসক কোনো ওষুধ দিলে নিয়মিত খান। তাছাড়া তার পরামর্শ মতো ব্যায়াম, খাওয়া দাওয়া করুন। ভালো করে ঘুমান। ভালো মানের রানিং জুতা ব্যবহার করুন।
আর্থ্রাইটিস কপালে থাকলে হবেই: আর্থ্রাইটিসের প্রতিটি ক্ষেত্রে আগে থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কারণ বয়স বাড়ার মতো কিছু ঝুঁকি পরিবর্তনযোগ্য নয়। তবে আর্থ্রাইটিসের সূত্রপাত রোধ করতে বা এর বৃদ্ধি ধীর করতে নির্দিষ্ট ঝুঁকির কারণগুলি দূর করতে বা কমিয়ে আনতে পারেন। যাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন আছে তাদের হাঁটুর অস্টিওআর্থারাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এছাড়া পুষ্টিকর খাবার খান।
রোগ হওয়ার ঝুঁকি কাদের বেশি?
অতিরিক্ত ওজনের মানুষ: উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন ঠিক রাখতে না পারলে মেদ সাধারণত কোমরে জমে। এই অতিরিক্ত ওজন বা মেদকে বহন করার শক্তি আমাদের পৃষ্ঠদেশ কিংবা হাঁটুর জয়েন্টের থাকে না। আর সেখান থেকেই শুরু হয় ব্যথা।
অতিরিক্ত ওজনের শিশু: বিশ্বের ৪১ মিলিয়নের বেশি শিশুরই বয়সের তুলনায় ওজন বেশি। স্থূল শিশুদের আর্থ্রাইটিস বা বাতের ঝুঁকি বেশি।
সামুদ্রিক মাছ কম খাওয়া: সামুদ্রিক মাছ কম খাওয়া মানুষের মধ্যে বাত রোগের ঝুঁকি বেশি। তাই সপ্তাহে দুদিন টুনা, স্যামন, ইলিশ বা কোরাল মাছ খেলে বাতকে দূরে রাখা সম্ভব।
ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করা: যারা কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম কম করেন, তাদের আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
পেশাগত চাপ: কিছু পেশায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার কিছু পেশায় সারা দিন বসে থাকতে হয়। এসব পেশার লোকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া যারা ভারী কাজ করে, তাদেরও এই সমস্যা হতে পারে।