পরিবেশ সচেতন ১২ জন উদ্যোক্তার উদ্যোগে রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউতে তিন দিনব্যাপী ‘বাহারি–টেকসই চারু ও কারুশিল্পের প্রদর্শনী’ শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ)। এ প্রদর্শনী চলবে শনিবার (২ এপ্রিল) পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় প্রদর্শনীস্থলে ‘বাংলাদেশের চারু ও কারুকলা’ বিষয়ক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিবি প্রোডাকশনের প্রতিষ্ঠাতা ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল ও স্থপতি মোস্তফা খালিদ পলাশ।
‘বাহারি’ স্বতন্ত্র এবং বৈচিত্র্যময় চারু ও কারুশিল্পের একটি প্রদর্শনী, যা দেশের ঐতিহ্য এবং মানুষের সংস্কৃতিতে নিহিত। এ প্রদর্শনীর সব পণ্য স্থানীয় উপকরণ ও প্রক্রিয়া ব্যবহার করে দেশেই তৈরি করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ প্রদর্শনী আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তারা। প্রদর্শনীর বড় অংশ উন্মুক্ত স্থানে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রদর্শনীতে শিশু, পোষ্যপ্রাণী ও পরিবারের সবার জন্য সুব্যবস্থা রাখা হবে।
দ্বাদশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দায়িত্বশীল উৎপাদন ও ভোগের সংস্কৃতি তৈরি ও প্রচারের মূলমন্ত্রকে ধারণ করে এ উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এবারের আয়োজনে অংশ নেওয়া ১২ জন উদ্যোক্তার প্রত্যেকে নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ব্র্যান্ডগুলো স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে তাদের পণ্য রফতানি ও বিক্রি করে আসছে।
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে এ উদ্যোক্তারা তাদের মান ও মূল্যবোধ বজায় রেখেছেন। বাহারির উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন, দেশ ও পরিবেশের প্রতি মমতা, আগ্রহ এবং পরিবেশদূষণ নিয়ে উদ্বেগের কারণে তারা এবার একত্রিত হয়েছেন।
স্বাভাবিক সময়ে নিজস্ব বিপণিবিতান ও বিপণন কাঠামোতে (আউটলেট ও নিয়মিত চ্যানেল) মেলা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে নিজেদের পণ্য বিক্রি করে থাকেন উদ্যোক্তারা। তবে মহামারির কারণে মেলা, উৎসব এবং প্রদর্শনী গেল দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।
প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রিত করতে এবং কর্মী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য সীমিত পরিসরে এ পণ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ‘বাহারি’।
বাহারির উদ্যোক্তদের মধ্যে রয়েছেন- ‘স্টুডিও উড়ান’-এর সাফিয়া শামা। তিনি পোশাক পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। চামড়াজাত পণ্য নিয়ে কাজ করা তাসলিমা মিজির ‘গুটিপা’। ফারহিন খানের ‘জুটমামা’ কাজ করছে পাটজাত পণ্য নিয়ে। পাটের বহুমুখী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন আরেক উদ্যোক্তা সহিদুল ইসলাম হেলাল। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বেনি বুনন’।
আম্মান রশীদের ‘আদি লোহাকাড়া’ কাজ করছে রিসাইকেল জুয়োলারি এবং খালেদ মাহমুদের ‘এম আই বি স্পিরিট’ কাজ করছে আপসাইকেল এক্সেসরিজ নিয়ে। জহরা খানের ‘জিকে কুটোর’ কাজ করছে জামদানি নিয়ে। প্ল্যান্ট ও উপহারসামগ্রী নিয়ে কাজ করছেন রুবাইয়াত আলী ও রাইসা বৃষ্টি। তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম প্লান্ট এফেয়ার।
আট অ্যান্ড ক্রাফট নিয়ে কাজ করছে ‘ঢাকা ইয়াহ’, ন্যাচারাল বিউটি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছে ‘রিবানা’, শাওন আকন্দ কাজ করছেন টি-শার্ট ও হ্যান্ডি ক্রাফট নিয়ে। তার প্রতিষ্ঠান ‘যথাশীল্প’। আব্দুস সালামের ‘ডিউ ক্রাফটস’ কাজ করছে হ্যান্ডি ক্রাফ্ট ও পোশাক নিয়ে।
ফিদা হকের ‘প্রাণীসেবা’। বিধান চন্দ্র পলের প্রভা অরোরা। তিনি কাজ করছেন ক্লে নিয়ে। মাহরুখ মহিউদ্দিনের ‘ইউপিএল’ কাজ করছে প্রকাশনী নিয়ে। রুবিনা রহমান চৌধুরীর ‘পিএইচডব্লিউসি’ মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক। এছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডালও রয়েছে এ উদ্যোগে।
অনুষ্ঠানটির মূল আয়োজক ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে আছেন স্টুডিও উড়ানের সাফিয়া শামা। এছাড়াও সহ-আয়োজক হিসেবে আছেন গুটিপা ও জুটমামার প্রতিষ্ঠাতা তাসলিমা মিজি ও ফারহিন খান।