কনক্রিট চার দেয়ালের ভেতর টিভি কিংবা ল্যাপটপের স্ক্রিনের সামনে আমাদের বসবাস। না চাইতেই জীবনটা যেন আটকে গেছে ছোট এই গন্ডির মাঝে। এর বাইরে খুব বেশি হলে গ্রামের জীবন কল্পনা করা যায়। কিন্তু তার বেশি কিছু আমরা ভাবতেও পারি না। এমনকি জানিও না যে, চেনাজানার গন্ডির বাইরেও বিচিত্র ও ভিন্ন হতে পারে মানুষের জীবন।
বিভিন্ন দেশের বিলুপ্তপ্রায়, বিচ্ছিন্ন আদিবাসীদের জীবনযাপনের ধরণ ও বৈচিত্রতা অনেক ক্ষেত্রে কল্পনাকেও হার মানায়। তাদের জীবনধারণের চিত্র, তাদের নিজস্ব ধারা, স্বকীয়তা ও ঐতিহ্যকে ইতিহাসের পাতায় তুলে ধরার জন্য ১৭ বছর বয়স থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন আদিবাসীদের ছবি তুলে আসছেন জিমি নেলসন।
সদা হাস্যোজ্জ্বল জিমি প্রতিটি আদিবাসী দলের সঙ্গে একটানা দুই সপ্তাহ থাকেন। তাদের খাবার খাওয়া, ঘুমানো ও পোশাক পরিধানের ধরণ, বিশ্বাস, দর্শন এবং তাদের সম্পূর্ণ জীবনটাকেই বোঝার চেষ্টা করেন খুব কাছ থেকে। তাদের কাছ থেকে জীবনকে বোঝার ও শেখার চেষ্টাও করেন অবিরত।
এরপরেই তাদেরকে ফ্রেমে বন্দী করেন খুব যত্ন নিয়ে। ফটোগ্রাফার জিমির তোলা এইসকল অসাধারণ ছবি নিয়ে ইতিমধ্যেই দুইটি বই বের হয়েছে। ‘বিফোর দে পাস এওয়ে’ এবং ‘হোমেজ টু হিউম্যানিটি’।
নিজের কাজ প্রসংঙ্গে জিমি বলেন, ‘ঠিক সতের বছর বয়সে আমার এই যাত্রাটি শুরু হয়েছিল, যেটা এখনও চালু আছে। এর মাধ্যমে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। যদিও আমি এটাকে ফটোগ্রাফি ও বিভিন্ন আদিবাসীদের তুলে ধরার প্রজেক্ট বলে থাকি, কিন্তু আসল সত্যটি হচ্ছে- এর মাধ্যমে আমি আরো বেশি প্রাণবন্ত ও আনন্দের সঙ্গে বাঁচতে শিখি প্রতিনিয়ত’।
এই যাত্রা, বিভিন্ন দেশ ঘুরে আদিবাসীদের ছবি তোলা, তাদেরকে সবার সামনে তুলে ধরার প্রয়াসটি জিমির ভাষায় যেটাই হোক না কেন- এই সকল ছবি, ছবির সঙ্গে তথ্য, বর্ণনা ও মানচিত্রে তাদের অবস্থান তুলে ধরার মাধ্যমে খুব সহজেই সমাজ, সংস্কৃতি এমনকি ভৌগলিক পরিবর্তনের উপজাতিদের গুরুত্ব বোঝা সম্ভব হয়।
দারুণ খবর হচ্ছে, জিমি তার তোলা ১৫০০ টির বেশি ছবি নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছেন। তার ভাষ্যমতে, বিভিন্ন ছেঁড়া ও টুকরো অংশকে জোড়া লাগিয়ে বিভিন্ন আদি ও পুরনো মানবজাতির সংস্কৃতির যাত্রার চলমান ছবি তৈরি করে সবার সামনে উপস্থাপন করা হবে চমৎকার একটি কাজ।
আরো পড়ুন: একই ফ্রেমে বাস্তবতার এক ভিন্ন চিত্র!
আরো পড়ুন: ক্যানসার জয় করা জেলি আর্টিস্ট