মেলা মানেই আনন্দ। মেলা মানেই উৎসবের আমেজ। সেই আনন্দ ও উৎসবের আমেজে আরও খানিকটা রঙ ছড়িয়ে আজ থেকে শুরু হয়েছে ‘পৌষ হুটহাট মেলা ২০১৯’। রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ এর মাইডাস সেন্টারে ১১ জানুয়ারি (শুক্রবার) থেকে শুরু হওয়া দুই দিন ব্যাপী ‘মেয়ে’ আয়োজিত এই মেলাটি সকালে ১০টা থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে রাত ১০টায়।
‘মেয়ে’ বাংলাভাষী নারীদের নিয়ে গড়ে ওঠা একটি অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক। ২০১১ সালের জুনে একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে যাত্রা শুরু করে অনলাইন থেকে অফলাইনে সম্মিলিত মত বিনিময়, ভাবনার বিকাশ ও উদ্যোগের প্রসারের মধ্য দিয়ে গত ৬ বছরে প্রায় ৬ হাজার নারীর নির্ভরতার ঠাঁই হয়ে উঠেছে ‘মেয়ে’।
‘মেয়ে’র পক্ষ থেকে এবারের মেলার আয়োজন করেছেন স্মিতা দাস এবং সাবরিনা আমান রিভী। আয়োজক স্মিতা দাসের সঙ্গে বার্তা২৪ পক্ষ থেকে কথা বলে জানা যায় ‘হুটহাট প্রথম পর্বের এই মেলায় সকলের অভাবনীয় সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বরাবরই ‘মেয়ে’ আয়োজিত ‘রাঙতা’ মেলায় দর্শক-ক্রেতা সমাগম বেশি থাকে। তবে এবারের আয়োজনে তার মাত্রাটা বেড়েছে আরও বেশ অনেকটা।
মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিটি উদ্যোগ নির্বাচন করা হয়েছে তাদের পণ্যের গুণগত মান, দেশীয় আবহ, স্বকীয়তা ও পণ্যের দাম বিবেচনার মাধ্যমে। মোট ২২টি স্টলে ২৩টি উদ্যোগের সমারোহে সেজেছে এবারের মেলা। সম্পূর্ণ দেশীয় ও হাতে তৈরি পণ্যে সাজানো প্রতিটি স্টলেই রয়েছে মন ভালো করে দেওয়ার মতো আয়োজন। মেলা জুড়ে আছে শাড়ি, কামিজ, ফতুয়া, গহনা, টিপ, বই, হরেক রকম খাবার প্রভৃতি অনুষঙ্গ।
মেলায় অংশ নেওয়া উদ্যোগ ‘চিহ্ন’র কর্ণধার মালিহা তাবাসসুমের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় জানালেন, আসন্ন ফাল্গুনকে সামনে রেখেই বিভিন্ন ধরণের কাঠ, কয়েন ও পুঁতির মালা ও চুড়ি এসেছে এবারের আয়োজনে। ক্রেতাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন প্রশ্নের মুখে উচ্ছ্বসিতভাবে বললেন, ‘সকাল থেকেই মেলায় অনেক মানুষ আসছে। যতটুকু আশা করেছিলাম তার চাইতেও অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। খুবই ভালো লাগছে’।
ইতোমধ্যে অনলাইন ও অফলাইন জগতে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘পটের বিবির’ কর্ণধার ও প্রতিষ্ঠাতা ফোয়ারা ফেরদৌস কথা বলে জানা যায়, পৌষ হুটহাট মেলাতেই তাদের তিনটি নতুন পণ্য এসেছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার আঁকা ছবি নিয়ে তৈরি করেছেন শাড়ি।
পটের বিবির একেবারেই নিজস্ব নকশা ও কম্পোজিশনে এসেছে ‘বিউটি বোর্ডিং’ শাড়ি। পটের বিবি তাদের চমৎকার শাড়ির জন্য পরিচিত হলেও, এই মেলাতে এসেছে তাদের নতুন প্রোডাক্ট লাইন ‘ললিতা’। ললিতা হলো বিভিন্ন তন্তুর উপরে হাতে আঁকা কুর্তি।
মেলার পরিসর ঘুরে দেখা গেলো ক্রেতাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি। দেশীয় ও হাতে তৈরি পণ্যের উপর টান ও ভালোবাসা থেকেই মেলায় ছুটে আসা। এমনটাই জানালেন মেলায় আসা ক্রেতা সাবরিন সুলতানা।
সবচেয়ে দারুণ বিষয় হলো মেলায় বেশ কয়েকটি চমৎকার সুবিধা রয়েছে ক্রেতাদের জন্য। মেলায় হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশে কোন বাঁধা নেই। এছাড়া শিশুদের মায়ের দুধ পানের জন্য থাকছে আলাদা স্থান এবং মেলায় রাখা হয়েছে কার্ডে দাম পরিশোধের ব্যবস্থাও।
যারা একটু ভিন্ন ও ব্যতিক্রমী পণ্য পছন্দ করেন এবং দেশীয় পণ্যের খোঁজ করেন, তাদের জন্য এই মেলার আয়োজনটি দারুণ মানানসই। পছন্দসই পোশাক, গহনা, খাবার ও মন খুলে গল্প করার জন্য হলেও, একটিবার মেলায় ঢুঁ দিয়ে আসা প্রয়োজন সকলের।
পৌষ হুটহাট মেলাটি চলবে আগামীকাল রাত দশটা পর্যন্ত। স্বদেশী পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হবার এমন চমৎকার সুযোগটি হাতছাড়া করা উচিৎ হবে না একদম।
আরও পড়ুন: শীতের আমেজে ‘পৌষ মেলা’