‘ভালোবাসা’ যেখানে জিতে যায় বারবার!

বিবিধ, লাইফস্টাইল

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল | 2023-08-26 14:28:58

ভালোবাসা ও ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে আক্ষেপ কিংবা অভিযোগ রয়েছে অনেক।

কেউ কেউ তো দাবিও করে, আদতে ভালোবাসা বলে কিছুই নেই। মিথ্যে কিছু অনুভূতির গায়ে বাহুল্য কিছু রঙ ছড়িয়ে উপস্থাপন করা মাত্র।

এমনটা বলবেই বা না কেন? চারপাশের ঘটনা বহুল পরিবেশ ও বর্তমান পরিস্থিতি দেখে এমনটাই বোধ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যতিক্রম কিছু ঘটনা থাকে, থাকে একেবারেই অবাক করে দেওয়ার মতো কিছু ঘটনা। যা নতুনভাবে ভাবতে শেখায়, বিশ্বাস করতে শেখায়।

চোখ খুলে দেওয়ার মতো ভালোবাসার একটি গল্পে জানা যাবে অনেক কিছুই। বাস্তব এই গল্পের প্রধান দুই চরিত্র হলেন- পল ও ক্রিস শারন ডিফজ। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত এই দুইজন মানুষ একেঅপরের সঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছেন টানা ২৫টি বছর!

ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে ধারণা না থাকলে জেনে নিন, ডিএস (DS) বা ডাউন সিনড্রোম ট্রিসমি২১ (Trisomy 21) নামে পরিচিত এক ধরণের জেনেটিক্যাল ডিসঅর্ডার। এই ডিসঅর্ডারের ফলে শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধিতে সমস্যা দেখা দেয়, বুদ্ধিবৃত্তি ডিসঅর্ডার ও ফেসিয়াল স্ট্রাকচারে সমস্যা দেখা দেয়।

এবার তাহলে পল আর ক্রিসের ভালোবাসার মিষ্টি গল্পটা শুরু করা যাক। আজ থেকে প্রায় তিন দশক তথা তিরিশ বছর আগে এক নাচের অনুষ্ঠানে পল ও ক্রিসের দেখা দেয়। প্রথমদিনে দেখা মাত্রই ক্রিস ভালোবেসে ফেলেন পলকে। হ্যা, একদম প্রথম দিনের প্রথম দেখাতেই ক্রিস বুঝে গিয়েছিলেন, কার সাথে জীবনের বাকি সময়টুকু কাটাতে চান তিনি। ক্রিসের ভাষ্যমতে, ‘আমি পলের চোখের দিকে তাকিয়ে আমার ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলাম’।

সেই দিন থেকেই তাদের ভালোবাসার সম্পর্কটা শুরু। প্রথমদিকে দুই পরিবারের কেউই তেমন একটা পাত্তা দেয়নি এই সম্পর্কে। দুইজন ডাউন সিনড্রোমের মানুষ কিভাবে একসাথে থাকবে, একে-অন্যকে বুঝবে, সামলাবে! কিন্তু সবার এমন ধারণাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পাঁচ বছরের ভালোবাসার সম্পর্কটিকে পাকাপোক্ত করতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো পল ও ক্রিস।

এবারেও বেঁকে বসলো উভয়ের পরিবার। স্বাভাবিকভাবে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত মানুষ বয়সের তুলনায় বেশ অনেকখানি অপরিণত হয়। তাদের আবেগ ও মন-মেজাজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না বললেই চলে। সেখানে কীভাবে একই সমস্যায় আক্রান্ত দুইজন মানুষ এক ছাদের নিচে থাকবে!

কিন্তু সবার দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে একেঅন্যের ছায়া হয়ে, একেঅপরের হাত ধরে কাটিয়ে দিলো টানা ২৫টি বছর।

এই দীর্ঘ সময় একসাথে কাটিয়ে দেওয়া, পরস্পরকে ভালোবাসার পেছনের রহস্যাটা জানায় ৫৮ বছর বয়সী ক্রিস। তাদের জীবনে ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং ৫৪ বছরের স্ত্রী পলকে মানসিকভাবে সমর্থন ও সাহায্য করার মাঝেই সবকিছু গুছিয়ে নিতে পেরেছেন তারা।

প্রতি বছরের ভালোবাসা দিবসেই পল তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য হাতে তৈরি কার্ড নিয়ে অপেক্ষা করেন ক্রিসের কাজ থেকে ফেরার জন্য। অন্যদিকে ক্রিস রান্না করতে ভালোবাসলেও, ভালোবাসা দিবসে বাইরে খেতে বের হন তারা একসাথে।

প্রতিটি গল্পে যেমন চরাই-উতরাই থাকে, ক্রিস-পলের জীবনেও রয়েছে। টাইপ-১ ডায়বেটিসের রোগী হলেন ক্রিস এবং আর্লি-স্টেজ ডিমেনশিয়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে স্ত্রী পলের। কিন্তু এই সকল সমস্যা তাদের ভালোবাসা ও একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞার কাছে খুবই তুচ্ছ।

দিনের মাঝে চারবার ক্রিসকে ইনস্যুলিন দিয়ে দেয় পল, যে ব্যাপারটি ক্রিস খুবই উপভোগ করেন। অন্যদিকে ক্রিসের নিজ থেকে রান্না শিখে পারদর্শী একজন রাঁধুনি হয়ে ওঠা ও হাই স্কুল গ্রাজুয়েট হওয়ার বিষয়ে দারুণ গর্বিত বোধ করেন পল।

উভয়ের শারীরিক সমস্যা, রোগের প্রকোপ ও পারিপার্শ্বিক সমস্যা এড়িয়ে এখনও তারা একসাথে আছেন। পরস্পরের ছোটখাটো বিষয়ে সমর্থন করা, সাহায্য করার মাঝেই প্রকাশিত হয় তাদের ভালোবাসা।

যেখানে আশেপাশের সকলে প্রশ্ন তুলেছিল ক্রিস ও পলের ভালোবাসা নিয়ে, সেখানে প্রতিদিন তাদের ভালোবাসা জিতে গিয়েছে সকল প্রশ্নকে ডিঙ্গিয়ে।

আরও পড়ুন: দ্বীপে বসে বই লিখে পুরষ্কার জিতলেন শরনার্থী

আরও পড়ুন: মাত্র সাত বছরেই মিলিয়নিয়ার ইউটিউবার

এ সম্পর্কিত আরও খবর