হাসপাতালে অলস সময় কাটবে বই পড়ে

বিবিধ, লাইফস্টাইল

এস এস আল আরেফিন | 2023-12-20 19:51:14

নিজের বা অন্য কারোর শারীরিক সমস্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হাসপাতালে গেলেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

এছাড়া চিকিৎসার জন্য কেউ হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও, হাসপাতালে তার স্বজনদের কাটাতে হয় দীর্ঘ অলস সময়।

এই ডিজিটাল যুগে অলস সময় মানেই মুঠোফোনে এক অ্যাপ থেকে অন্য অ্যাপে ঘোরাঘুরি করা। মুঠোফোন ছাড়া অবসর সময় কাটানোর সঙ্গী কোথায়! তবে হাসপাতালগুলোতে যদি লাইব্রেরি থাকতো, মুঠোফোন ছেড়ে অনেকেই ইচ্ছেমত বই, ম্যাগাজিন পড়ে সময়গুলো পার করে দিতো আনন্দে। বই পড়ুয়া মানুষগুলোর জন্য বই পড়ে অবসর সময় কাটানোর চাইতে প্রিয় আর কোন কাজ হতেই পারে না।

সবাইকে বই পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে ও বই পড়ুয়াদের সাহায্যে ঢাকা শহরে চালু হয়েছে এমনই এক অভিনব হাসপাতাল লাইব্রেরি। চমৎকার ও ব্যতিক্রমী এই লাইব্রেরির গল্পটা জেনে নেওয়া যাক।

সোস্যাল চেইন ফর ডেভেলপমেন্ট নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের শিক্ষা প্রকল্প ‘বইবন্ধু’ এর অধীনে রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের হুমায়ুন রোডে অবস্থিত ইনফার্টিলিটি কেয়ার এন্ড রিসার্চ সেন্টার (আইসিআরসি) নামের বেসরকারী একটি হাসপাতালে চালু হয়েছে ঢাকার প্রথম হাসপাতাল লাইব্রেরি।

জুতা খুলে কাঁচের দরজা ঠেলে হাসপাতালটিতে প্রবেশ করলেই হাতের ডানপাশে চোখে পড়বে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত লম্বা একটি শেলফে রাখা বই ও ম্যাগাজিন।  

হাসপাতালটিতে আগত রোগী, রোগীর স্বজন বা যে কেউ চাইলেই এই লাইব্রেরি থেকে বই, ম্যাগাজিন নিয়ে পড়তে পারেন। পড়া শেষে বইগুলো নিজেকেই পুনরায় আগের জায়গায় রেখে যেতে হয়।

এমন লাইব্রেরি থাকার কারণে মানুষের মানসিকতাতেও পরিবর্তন এসেছে বলে জানান হাসপাতালটির কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদ আলম। তিনি বলেন, ‘আগে মানুষ ডাক্তার দেখাতে আসলে সময় বেশী লাগলে বিরক্ত হতো। কিন্তু এখন বই থাকায়, যারা বই পড়েন তারা বুঝতেই পারেনা সময় কিভাবে কেটে যায়। ফলে মানুষের বিরক্ত হওয়াটাও কমেছে’।

হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা চিকিৎসক ডাঃ সামিরা রহমান বলেন, ‘এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। ডাক্তারের কনসালটেন্সি নিতে এলে সময় লাগবে এটা সবাই জানি। এই সময়টা নষ্ট না করে বই পড়লে আমাদেরই উপকার হবে’।

বইবন্ধু প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দীন তোহা এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, ‘আজকাল আমরা সবাই বড্ড বেশী ভার্চুয়াল হয়ে গেছি। সবসময় মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকি আর এতে করে দিন দিন আমরা বই বিমুখ হয়ে যাচ্ছি। এ কারণে আমাদের মনে হয়েছে মানুষকে বইমুখী করতে হবে। যে সব স্থানে মানুষ অনেক বেশী সময় অপেক্ষমান থাকে, সেসব স্থানে লাইব্রেরি থাকলে মানুষ কৌতুহল থেকে হলেও বই হাতে নিবে, পড়বে’।

তিনি আরো বলেন, ‘বই হাতে নিয়ে ২-১ পৃষ্ঠা পড়লেও একজন মানুষের সময় পার হয়ে যাবে আর ঐ ২-১ পৃষ্ঠা যদি তার মনে ধরে তবে সে পুরো বইটাই পড়তে চাইবে। এতে করে তার মাঝে বই পড়ার আগ্রহ জন্মাবে’।

২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে চিকিৎসকদের ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন ‘প্লাটফর্ম’ এর সহযোগিতায় ১৪৫টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই লাইব্রেরির সিংহভাগ বইয়ের যোগান দিয়েছে বইবন্ধু। যা তারা সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করেছে।   

কোন পৃষ্টপোষকতা না থাকায় লাইব্রেরি গুলোতে যেমন পর্যাপ্ত বই সরবরাহ করতে পারছেন না তেমন নতুন করে লাইব্রেরি স্থাপনেও বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান সংগঠনটির এই সমন্বয়কারী।

এর আগে সংগঠনটি ঢাকার বেশ কয়েকটি গণপরিবহনে লাইব্রেরি স্থাপন করে দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে বেশ সমাদৃত হয়েছে। বার্তা২৪ থেকেও তাদের গণপরিবহন লাইব্রেরি নিয়ে বিশদ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।

 

গণপরিবহন লাইব্রেরি ও হাসপাতাল লাইব্রেরির পাশাপাশি, সম্প্রতি তারা অবহেলিত হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য ‘আলোর পাঠাগার’ নামের একটি লাইব্রেরিও স্থাপন করেছেন।

আরো পড়ুন: শিশুরা বড় হবে ‘মুজিব’কে পড়ে!

আরো পড়ুন: ১২ কারণে গড়ে তুলুন বই পড়ার অভ্যাস

এ সম্পর্কিত আরও খবর