বর্তমান বিশ্বে নারীর অধিকার, দাবি আদায় এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে নানা আন্তর্জাতিক সংগঠন। কর্মক্ষেত্রের সকল জায়গায় নারীদের সরব পদচারণা এখন চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ৫০ বছর বা একশ বছর আগের চিত্র ছিলো ভিন্ন। নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা ছিলো শত। সেসব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন এমন নারীদের নাম জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
যারা আজকের নারীদের অনুপ্রেরণা যোগান সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য, এমন কয়েকজন নারীর কথা তুলে ধরা হলো বার্তা২৪.কম এর পাঠকদের জন্য।
ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে ধরা হয় ক্লিওপেট্রাকে। পরমা সুন্দরী হিসেবে তিনি যতো খ্যাতি পেয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি পেয়েছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন নারী হিসেবে। সে যুগের পুরুষদের কাছে যেসব কাজ ছিলো অসম্ভব তা তিনি অনায়েসে করেছিলেন বিনা বাধায়। ইতিহাসবিদরা কেউবা লিখেছেন ক্লিওপেট্রার ভালো দিকগুলো নিয়ে কেউবা আবার বেশি লিখেছেন তার খারাপ দিক নিয়ে। কারণ একদিকে তিনি যেমন ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পারতেন ঠিক তেমনি প্রয়োজনে নির্মম, হিংস্র হতেও দ্বিধাবোধ করতেন না।
পেশায় একজন নার্স ছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল। নার্সিং পেশার বিষয়ে মানুষের ধারণাই পাল্টে দিয়েছিলেন এই মহীয়সী নারী। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে হাজারো সৈন্যের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন সেবা শুশ্রূষার মাধ্যমে। নার্সিং পেশার অগ্রদূত বলা হয় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে। নার্সিং একটি পেশা নয় সেবা, এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। রয়াল রেড ক্রস, অর্ডার অফ মেরিটসহ নানা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।
মেরি কুরি প্রথম নারী বিজ্ঞানী যিনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে মেরি কুরির ভূমিকা লেখা রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। প্রথম এক্স-রে মেশিন আবিষ্কারও করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় ১৯১১ সালে ফের তিনি নোবেল পুরস্কান পান। তবে ১৯১১ সালের নোবেল পুরষ্কারটি তিনি পেয়েছিলেন রসায়নে।
অসহায়, দুস্থ, দরিদ্র্য মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করেছেন মাদার তেরেসা। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে যোগ দেন 'সিস্টার্স অফ লোরেটো' সংস্থায়। গরীব এবং অনাহারিদের খাবার ও আবাসনের অর্থ জোগাড়ের জন্য তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। কলকাতায় মাত্র ১৩ জন সদস্যের ছোট্ট অর্ডার হিসেবে চ্যারিটির যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। বর্তমানে এর অধীনে ৪ হাজারেরও বেশি সন্ন্যাসিনী কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইড্স আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। ১৯৭৯ সালে মাদার তেরেসা শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার, ১৯৮০ সালে ভারতরত্ন, ১৯৮৫ সালে প্রেসিডেনসিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম ও বালজান পুরষ্কার পান ১৯৭৮ সালে।
গায়ের রং মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে যে বাধা হয় না তা প্রথম যিনি প্রমাণ করেছিলেন তিনি হলেন মেরিলিন মনোরো। 'ডাম্ব ব্লন্ড' এর কুখ্যাত নামকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী, বিচক্ষণ অভিনেত্রী হিসেবে নিজের পাকাপোক্ত স্থান করে নেন মেরিলিন মনোরো। শুধু তাই নয় তিনি একাধারে মডেল ও গায়িকা হিসেবেও সুপরিচিত ছিলে। এখনকার অভিনেত্রীদের কাছে রোল মডেল মেরিলিন মনরো। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ গোল্ডেন গ্লোব পুরষ্কার পেয়েছিলেন বিখ্যাত এই অভিনেত্রী।
নারী অধিকার নিয়ে যেসকল নারীবাদীরা রাজপথের আন্দোলনে সরব ছিলেন তাদেরই একজন অ্যামেলিন প্যাংখার্স্ট। তিনি ‘দ্যা ওমেন স্যোসাল এন্ড পলিটিক্যাল ইউনিয়ন’ এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় সামাজিক রাজনৈতিক ও রাজপথের আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।