অন্য সকল সম্পর্কের চাইতে একেবারেই ভিন্ন, আলাদা। দু’জনের মাঝে সম্পর্কটি কখনো দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ, মধুর। কখনো দূরত্বের, জটিল। কখনো একে-অপরকে বুঝে উঠতেই পার হয়ে যায় এক জীবন। আবার কখনো পরস্পরের সবচেয়ে কাছের মানুষটি হয়ে ওঠেন একে-অন্যের।
মায়ের সাথে মেয়ের সম্পর্কটি যেমনই হোক না কেন, মায়ের স্থানে মা চিরদিন অপরিবর্তনশীল। সন্দেহাতীতভাবে এটাও সত্য যে, প্রতিটি সম্পর্কের মাঝেই আসে চরাই-উৎরাই, আসে দোটানা। মা-মেয়ের সম্পর্কের মাঝেও একটা নির্দিষ্ট সময় পর তৈরি হয় কিছু ‘ইস্যু’। যা সম্পর্কের মাঝে সৃষ্টি করে ‘ব্যবধান’।
এক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল বোঝাবুঝি, অহেতুক অভিমান, অতিরঞ্জিত প্রত্যাশা দায়ী অনেকাংশে। কারণ যেটাই হোক না কেন, মা-মেয়ের মাঝে সম্পর্কটি সবসময় সাবলীল থাকবে, এমনটা চান প্রতিটি মা ও মেয়ে। চমৎকার এ সম্পর্কের মাঝে যে কারণগুলো সমস্যা তৈরি করে থাকে তার কয়েকটি এখানে আলোচনা করা হল।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়, উভয়েই ভাবেন সম্পর্কটি ভালো হতো যদি আমার মা বা মেয়ে পরিবর্তন হতো। এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন, দু’জনেই সম্পর্ন আলাদা মানুষ। তাদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ ও স্বকীয়তা রয়েছে। রয়েছে নিজস্বতা। কেউই অন্যের জন্য নিজেকে পরিবর্তন করতে বাধ্য নয়। তবে মনে রাখা প্রয়োজন সম্পর্ক থেকে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে অন্যের জন্য কিছুটা ছাড় দিয়েই। মা যদি মেয়ে বুঝতে চেষ্টা করেন, তার মতামতকে গুরুত্ব দেন, মেয়ে কি পছন্দ করে সেটা জানার চেষ্টা করেন তবে সম্পর্কে দূরত্ব অনেকটা কমে যায়। একইভাবে মায়ের সাথে বয়সের ব্যবধান থাকায় চলতি সময়ের সবকিছু তিনি বুঝতে পারবেন না। মায়ের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে, তার অপছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে নিজের মতামতকে উপস্থাপন করলে অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যায়।
মা ও মেয়ে উভয়েই একে-অন্যের প্রতি প্রতাশ্যা রাখেন আকাসসম। এটাই স্বাভাবিক। ছোটবেলা থেকেই মেয়েরা মায়ের কাছ থেকে সর্বোচ্চ যত্ন ও সুরক্ষার মাধ্যমে বড় হয়। ফল মায়ের প্রতি মেয়েদের প্রত্যাশার ধরণ থাকে অনেক বেশি। অন্যদিকে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে গড়ে তোলা মেয়ের প্রতিও স্বাভাবিকভাবে মায়ের প্রত্যাশার পারদ আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সমস্যাটি হলো, কোনভাবে কোন প্রত্যাশা পূরণ না হলেই অনেক বেশি কষ্ট পেতে হয়। যা থেকে সম্পর্কের মাঝে দুরত্ব তৈরি হয়। তাই উভয়ের উভয়ের প্রতি প্রত্যাশা হতে হবে বাস্তবসম্মত।
ইংলিশে খুব ভালো একটি প্রবাদ আছে, Put oneself in someone's shoes. যার অর্থ হলো নিজেকে অন্যের স্থানে ভাবা, তার পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করা। এর মাধ্যমে খুব দারুণভাবেই অন্যের মানসিক অবস্থা, ভীতি, আশংকা, দুশ্চিন্তা ও কোন ঘটনা দেখার ভঙ্গী সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। মেয়ের সবকিছুটা মা কখনোই হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলাবেন না। তেমনিভাবে মায়ের সকল সিদ্ধান্ত মেয়ের মনঃপুত হবে না। উভয়ের পরিস্থিতি বোঝার জন্য তাই উভয়কেই উভয়ের স্থান থেকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
মা-মেয়ের মাঝে মনোমালিন্য হতেই পারে। এমনকি ঝগড়া হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু বিরূপ সময়ের শেষে পরিস্থিতি যখন ঝিমিয়ে গেছে তখন যে আগে অন্যের কাছে গিয়ে কথা বলবে, মান ভাঙাবে সেটা নিয়েই শুরু হয় এক স্নায়ুযুদ্ধ। মা ভাবেন, ও তো আমার মেয়ে। ওরই তো আমার কাছে আগে আসার কথা। ওই তো আগে আমার সাথে কথা বলবে! ওদিকে মেয়ে ভাবে, আমি তো তার মেয়ে, মা নিশ্চয় সব জানে আমি কি চাই। মা-ই তো আমার কাছে আগে আসবে, আমাকে আদর করে দিবে, কথা বলবে!
খুবই অমূলক এই স্নায়ুযুদ্ধ। এমন ভাবনা উভয়পক্ষেরই বাদ দিতে হবে। মনোমালিন্য কিংবা তর্ক যাই হোক না কেন, সবশেষে নিজেকে আগে এগিয়ে নিতে হবে কথা বলার জন্য পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করার জন্য। মা কেন আগে আসলো না, মেয়ে কেন কথা বললও না- এমন ভাবনা শুধু দূরত্বই তৈরি করে।
অমূল্য এই সম্পর্কের মাঝে কোন সমস্যার দেখা দিক, এমনটা কেউই চান না। অযাচিত কোন কারণে চমৎকার এই সম্পর্কের গাঁথুনি যেন নষ্ট না হয়, তাইতো সেদিকে মা ও মেয়ে উভয়েরই খেয়াল রাখতে।
আরও পড়ুন: সন্তানকে বলুন আপনার ব্যর্থতার গল্পটি
আরও পড়ুন: সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ