সৌন্দর্যবর্ধনে শরীরে ট্যাটু করার হার বাড়ছে দেশে। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ট্যাটু স্টুডিও। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে সেবা গ্রহণ করছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ। যা প্রতি বছর বাড়ছে ১০ শতাংশ হারে।
তুলির বদলে রোটারি মেশিন আর ক্যানভাসের বদলে শরীর। পার্থক্য শুধু এটুকুই। আর বাকি পুরোটাই শিল্প। যেখানে পদ্মফুল ফুটে উঠে ট্যাটু হয়ে। এই অঞ্চলে যার পরিচিতি উল্কি হিসেবে।
যদিও তা আকার প্রচলন একদমই ছিল না দশ বছর আগেও। তবে রাজধানী ঢাকা আর দেশের বড় শহরগুলোতে তরুণদেরকে কেন্দ্র করে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী ও অলিন ট্যাটু স্টুডিওর সত্ত্বাধিকারী সাদমান তৌহিদ অলিন ২০০৮ সালে শখের বসে ট্যাটু আকা শুরু করেন।
তিনি জানালেন, আমি যখন শুরু করি, তখন ট্যাটু সর্ম্পকে মানুষের ধারণাটা খুব বেশি পরিস্কার ছিল না। অনেকেই মনে করতো এটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে করে, আবার অনেকেই মনে করতো এটি কেটে করে। কেউ কেউ ভাবতো অন্য কোন ভাবে শরীরে ট্যাটু আঁকা হয়।
আমার অধিকাংশ গ্রাহক ছিল সঙ্গীতাঙ্গনের মানুষরা। তখন মাসে একজন দুজন করে এসে ট্যাটু আঁকাত। সেখান থেকেই প্রবৃদ্ধি শুরু হয়।
অলিন আরও বলেন, এখন পরিস্থিতি অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।
শিল্পীদের হিসাবে রাজধানীতে ছোট-বড় পাঁচটি ট্যাটু স্টুডিও গড়ে উঠেছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রয়েছে একটি। এসব স্টুডিওতে প্রতিমাসে প্রায় তিনশ গ্রাহক ট্যাটু আঁকছেন। এদের ৭০ শতাংশই নারী। অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ট্যাটু করাতে আসেন ৫০-৬০ বছরের মানুষও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় ট্যাটু করার খরচ খুব বেশি নয়। ট্যাটু আর্টিস ভালো সেবা দিচ্ছে। এসব কিছুর পর আমি কেন বিদেশে যাবো। গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে অনেক শিল্পী এখন প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণও নিয়ে এসেছে। গড়ে তুলেছে নিজেদের স্টুডিও। যেখানে সবচেয়ে ছোট আকারের ট্যাটুর খরচ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।
যা কম বেশি হয়, ট্যাটুর ডিজাইন, আকার আর অবস্থান ভেদে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।
ইঙ্কপার্ক ট্যাটু স্টুডিওর শিল্পী অভিজিৎ সাহা বলেন, বড় আকারের ট্যাটু এখনো খুব বেশি মানুষ করে না। ৫ থেকে ৭ আর ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার ট্যাটুই মানুষ বেশি করে।
তিনি আরও বলেন, আমি সারা মাসের কথা চিন্তা করলে লাখ খানেক টাকার ট্যাটু করা যায়। যদি সঠিক ভাবে কাজটি করি।
সাদমান তৌহিদ অলিন বলেন, আগে মানুষ একটি ট্যাটু করার জন্য দেশের বাইরে যেত। এখন দেখা যাচ্ছে, ট্যাটুটা আমাদের কাছ থেকে করছে। আমার কাছ থেকে না করলে অন্য কারো কাছ থেকে করছে। কিন্তু দেশেই ঘোরাফেরা করছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে বিশ্বমানের কিছু শিল্পী আনার চেষ্টা করবো। যাতে মানুষ বিদেশে না গিয়ে বলতে পারে তুমি ভালো ট্যাটু করার জন্য বাংলাদেশে যাও।
শিল্পীরা জানান, ব্যক্তির চাহিদার উপর নির্ভর করেই একেকটি ট্যাটুর নকশা চুড়ান্ত করা হয়। যা আঁকা হয় শতভাগ নিরাপদ পদ্ধতিতে।