অন্যদিকে অনেকেই মাছ-মাংস একেবারেই এড়িয়ে চলেন। নিরামিষাশী বা ভেজিটেরিয়ান মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। দেশের বাইরে তো বটেই, দেশের ভেতরে ইদানিং নিরামিষাশী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের দেশে ভেজিটেরিয়ান হওয়ার ধারণাটা খুব বেশিদিনের পুরনো নয়। সেক্ষেত্রে বলতেই হয়, 'ভেগানিজম’ (Veganism) বা ‘ভেগান’ (Vegan) হওয়ার ধারণাটি একেবারেই নতুন। আমাদের দেশে খুঁজলে ভেগান মানুষ পাওয়া যাবে হাতে গুণে কয়েকজন। বেশিরভাগই নিরামিষাশী তথা ভেজিটেরিয়ান।
ভেজিটেরিয়ানরা মাছ ও মাংস গ্রহণ করেন না। তবে দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য, ডিম, মধু প্রভৃতি গ্রহণ করেন। এদিকে ভেগান ব্যক্তিরা প্রাণী ও প্রাণীজাত কোন ধরনের খাদ্যদ্রব্যই গ্রহণ করেন না। সম্পূর্ণভাবে উদ্ভিজ খাদ্য উপাদান তথা ‘প্ল্যান্ট বেজড ফুড’ এর উপরে নির্ভরশীল ভেগান ব্যক্তিরা।
মধু, দুধ, ডিম সকলই ভেগান ডায়েটের বহির্ভূত। শুধু খাদ্য উপাদান নয়, ভেগানদের লাইফস্টাইলের ভেতরেও প্রাণীজাত কোন পণ্য থাকে না। তারা প্রাণীর চামড়া থেকে তৈরি পোশাক, ব্যাগ, অনুষঙ্গ, মেকআপ পণ্য ব্যবহার করেন না।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র গ্রেট ব্রিটেনে ২০০৬ সালে ভেগান ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১৫০,০০০ জন। যা ২০১৬ সাল নাগাদ এসে দাঁড়িয়েছে ৫৪০,০০০ জনে!
পাশ্চাত্যে ভেগান মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, বাড়ছে এই ধারণার জনপ্রিয়তাও। শুধুমাত্র সাধারণ মানুষ নন, সেলেব্রেটিরাও ভেগান হচ্ছেন এবং প্রকাশ্যে জানাচ্ছে তাদের ভেগান জীবনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে।
পরিচিত টেনিস তারকা ভেনাস উইলিয়ামস থেকে শুরু করে হাল সময়ে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী আরিয়ানা গ্র্যান্ডে ও মাইলি সাইরাসও ভেগান এবং তারা এই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে খোলাখুলিভাবে কথা বলেন। হাজারো মানুষের প্রিয় তারকা যখন কোন একটি খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কথা বলবে, তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে- স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হবে।
এমনকি বিগত কয়েক বছরে সাধারণ রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ও সংখ্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে ভেগান রেস্টুরেন্ট। যেনতেন কোন রেস্টুরেন্ট নয়, কেএফসির মতো বিশ্বব্যাপী সমাদৃত চেইন রেস্টুরেন্ট চলতি বছরের জুনে মার্কিন যুক্তরাজ্যে ভেগান বার্গার এনেছে তাদের মেন্যুতে।
সম্পূর্ণ ভেগান হয়ে যাওয়ার পেছনে মূলত বেশ কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে। তার মাঝে প্রধান কয়েকটি কারণ এখানে জানানো হলো।
কিছু ব্যক্তিরা ভেগান হয়ে যাচ্ছেন প্রাণীকে ভালোবাসেন বলে ও প্রাণীর প্রতি নির্মমতা বন্ধ করতে। ভেগানরা শুধু প্রাণীদের খাওয়ার বিষয়েই নয়, তাদের কাছ থেকে ডিম ও দুধ পাওয়ার জন্য যেভাবে তাদের ব্যবহার করে বড় বড় ফ্যাক্টরি ও ফার্মগুলো, সেটার বিষয়েও আলোকপাত করে থাকে।
ভেগানরা দাবি করেন, ফার্মের গরু থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয়। সেটা কীভাবে? ফার্মে কৃত্রিম পদ্ধতিতে স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি গরু উৎপাদন করা হয়। এক একটি গরু থেকে প্রায় ৪০০ লিটার বোতল পরিমাণ মিথেন গ্যাস নিঃসৃত হয়। যা পরিবেশের উপরে ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করছে। স্বাভাবিক মাত্রায় গরু যদি প্রকৃতিতে থাকতো, তবে তাদের থেকে নিঃসৃত মিথেন গ্যাস প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো, বাড়তি চাপ তৈরি করতো না। এছাড়া ফার্ম ও ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করার জন্য বড় বড় স্থানে স্থাপনা তৈরি করতে হচ্ছে। যেটা পরিবেশের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দিচ্ছে।
বেশকিছু ভেগান ব্যক্তিরা জানিয়েছে, স্বাস্থ্যগত কারণে তারা মাংস খাওয়া পরিহার করেছেন। যদিও কিছু ভেগানরা নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদান থেকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
তবে এমন সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের পুষ্টিবিদেরা জানিয়েছেন, ব্যালেন্সড ভেগান ডায়েট মেনে চলা সম্ভব শিশু ও বয়স্কদের। উদ্ভিজ খাদ্য উপাদান থেকেই শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পুষ্টি উপাদান যথাযথভাবে পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন: নকল মাংসে তৈরি পিৎজা!
আরও পড়ুন: কোন দেশে কী খেয়ে দিন শুরু হয়