সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘দেবদাস’ পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। জনপ্রিয় এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্র দেবদাস দেখেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটাও কিন্তু একইভাবে কষ্টকর।
বই পড়ার আবেদন কখনোই কমে না। বইয়ের গল্প অবলম্বনে নির্মিত চলচিত্রের ভেতরে পুরো গল্পটা তুলে ধরা হলেও বইয়ের আবেদনটা ঠিকভাবে যেন ফুটে ওঠে না। তবে যাদের হাতে সময়ের খুব অভাব, তাদের জন্য বই পড়ার চেয়ে দুই ঘণ্টার ভেতর বইয়ের গল্পটি দেখে নেওয়া বা জেনে নেওয়া অনেকখানি সহজ হয়। এর মাধ্যমে বই পড়া না হলেও যেন বইটা সম্পর্কে জেনে নেওয়া সম্ভব হয়।
ছকে বাধা জীবনে ব্যস্ত সবাই। বই পড়ার ইচ্ছা থাকলেও সময় কোথায়! একটি দুইশ পাতার বই পড়তে কমপক্ষে তিন-চারদিন সময় প্রয়োজন হয়। কাজের ভিড়ে টানা কয়েকদিন বই পড়ার জন্য সময় বের করাটা অনেকের পক্ষেই দুঃসাধ্য।
যেখানে মানুষজন বই পড়ার জন্য সময় বের করতেই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে একজন জার্মান নারী এক মাসের ভেতরেই পড়ে ফেলেছেন একশটি বই। একদম সঠিক সংখ্যাটি হলো একশ দুই!
জার্মানের বার্লিনে বসবাসকারী তেরেসা পেশায় একজন বিজনেজ ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার। চলতি বছরের মার্চ মাসে মনস্তাত্ত্বিক, রাজনীতি এবং নেতৃত্বমূলক একশটি বাস্তবধর্মী (Non-fiction) বই পড়ে ফেলেছেন তিনি। এমন অবিশ্বাস্য কাজটি তিনি কীভাবে করলেন? সেটার পেছনেও রয়েছে মজার একটি ঘটনা।
তেরেসার একজন সহকর্মী তাকে দুই ঘণ্টার ভেতর Malcom Gladwell’s Outliers: The story of Success in two hours বইটা সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করার চ্যলেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। খুব আগ্রহ নিয়েই বই পড়া শুরু করলেও স্বাভাবিকভাবেই বইটি দুই ঘণ্টার ভেতর পড়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি তেরেসার পক্ষে।
তবে এই ঘটনার পর থেকেই তেরেসা আরো বেশি বাস্তবধর্মী বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সময় স্বল্পতা এবং স্বল্প সময়ের মাঝে বেশি বই পড়ার জন্য তিনি বইকে ‘বাইট-সাইজ’ কন্টেন্টে রূপান্তরিত করা বিভিন্ন ব্লগ সাইট ও অ্যাপসের খোঁজ করা শুরু করেন।
অনেক খোঁজখবর করার পর তিনি শেষমেশ গুগল অ্যাপ স্টোর থেকে ব্লিঙ্কিস্ট অ্যাপ (Blinkist app) এর সাহায্যে বই পড়া শুরু করেন। এই অ্যাপে বাস্তবধর্মী বই এর গুরুত্বপূর্ণ অংশকে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়। যার ফলে খুব দ্রুত একটি সম্পূর্ণ বই পড়ে শেষ করে ফেলা সম্ভব হয়। এমনকি এই অ্যাপে বই শোনার ব্যবস্থাও আছে। ফলে শুনে শুনেও বই শেষ করা যায়।
এই অ্যাপের সাহায্যেই তেরেসা মাত্র এক মাসের ভেতরে একশটি বই পড়ে শেষ করে ফেলেছেন। গড়ে প্রতিদিন তিনটি করে বই পড়েছেন তিনি। নিজের এমন দারুণ অভিজ্ঞতার জন্য খুবই আনন্দিত তেরেসা।
তিনি জানান, তার অফিসের কাজ খুবই ক্লান্তিকর। যে কারণে অফিস শেষে বাসায় ফেরার পর তার মাথা একেবারেই কাজ করতে চায় না। এমন সময়ে ব্লিঙ্কিস্টের সাহায্যে অল্প সময়ের ভেতর একটি বই পড়ে শেষ করে ফেলা সম্ভব হয় এবং অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কেও জানা সম্ভব হয়। তেরেসার ইচ্ছা আছে সামনের দিনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আরো বেশি বই পড়ার।