একজন পুরুষের পদচারণাও নেই পুরো এলাকা জুড়ে। হয়তো অনেকে বলে উঠবেন, এটা তো ওয়ন্ডার ওম্যানের দ্বীপ। অভূতপূর্ব এই বিষয়টিকে শুধুই চিন্তা কিংবা কল্পকাহিনীর মাঝে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চাননি ক্রিস্টিনা রথ। ফিনল্যান্ডের উপকূলে নারীদের জন্য গড়ে তুলেছেন জাঁকজমক ও দৃষ্টিনন্দন ‘সুপারসি দ্বীপ’। যে দ্বীপটি পরিভ্রমণে যেতে পারবেন শুধুই নারীরা।
কী করা যাবে এখানে? এমন প্রশ্নের বদলে বরং ভাবুন কী করা যাবে না এখানে! ঘোড়ার পিঠে চড়া, সাঁতার কাটা, ইয়োগা, নাচ, সাউনা, রান্না শেখা থেকে শুরু করে নিজের মনের মতো করে অবসর সময় পার করা যাবে নিশ্চিন্তে! সকালে উঠেই পাওয়া যাবে প্রকৃতির সান্নিধ্য। বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে এমনকি ঝুলন্ত দোলনা থেকে বইও পড়া যাবে। সারাদিনের সেশন শেষে গা এলিয়ে সূর্যাস্ত দেখা যাবে মন ভরে।
এমন স্বর্গীয় স্থানে সময় কাটানোর জন্য গুণতে হবে বেশ মোটা অংকের মূল্য! মাত্র এক সপ্তাহের জন্য ৩৫০০ ডলার, যা বাংলাদেশী মূদ্রায় প্রায় ২৮০,০০০ টাকা। এতো চড়া মূল্য সম্পর্কে রথের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে তারাই আসে যারা সত্যিকার অর্থেই এখানে আসতে ইচ্ছুক এবং এখানে আসার জন্য আলাদাভাবে টাকা জমান’।
তবে এই দ্বীপে প্রবেশের জন্য শুধু সামর্থ্য থাকাই যথেষ্ট নয়। ইচ্ছা ও সামর্থ্যর পাশাপাশি আপনার মাঝে থাকতে হবে নতুন কিছু শেখার ও জানার আগ্রহ। প্রথমে আপনাকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। পরবর্তীতে রথ নিজে ভিডিও কলের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নিয়ে নির্বাচন করবেন এক সপ্তাহের জন্য দ্বীপ পরিভ্রমণকারীদের।
এখানেও রয়েছে সীমাবদ্ধতা! কয়েক হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে সকল যাচাই-বাছাই শেষে হাতে গুণে মাত্র ১০ জন নারীকে নির্বাচিত করা হয়।
এতো আয়োজন, এতো ব্যবস্থা, এতো উপলক্ষ্য সকলই শুধু নারীদের জন্য। বিষয়টা কি একটু বৈষম্যমূলক মনে হচ্ছে? এমন প্রশ্ন রথের কাছে রাখা হলে তিনি উত্তর দেন সুকৌশলে। ‘কোন পুরুষ নয়- এই বার্তার দিকে নজর দিবেন নাকি নারীদের জন্য- এই বার্তাটির দিকে, সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। আমি বলবো, শুধু নারীদের জন্য’।
রথ আরো জানান, সপ্তাহ ব্যাপী দশজন ভিন্ন নারীর একটি দ্বীপে অবস্থান তাদের সকলের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে। মানসিক, শারীরিক ও আত্মিকভাবে দৃঢ় হতে সাহায্য করে পুরো এই আয়োজনটি।
এই কথার সত্যতাও পাওয়া যায় এই দ্বীপে পরিভ্রমণের সুযোগ পাওয়া একজন সৌভাগ্যবতীর বার্তা থেকে। বুয়েনেকা নামক একজন দ্বীপ পরিভ্রমণকারী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তার পুরো ভ্রমণ নিয়ে। ‘সেখানে ভ্রমণ করা প্রতিটি নারীই এক একজন সম্পদে পরিণত হন। এটা আমার কল্পনার চাইতেও অনেক বেশি অর্থবহ ছিল’।
এই সুপারসি কনসেপ্টটা নারীদের অবসর যাপনের জন্য নয়। বরং নারীদের মাঝে নেটওয়ার্ক তৈরি, তাদেরকে দৃঢ় হতে সাহায্য করা ও পরস্পরের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের জন্যেই নেওয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ। যা তাদেরকে আরো পরিপূর্ণ হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে বলে বিশ্বাস করেন রথ।