করোনাভাইরাসের প্রভাবে যখন স্বাভাবিক জীবন যাত্রা বিঘ্নিত, ঠিক তখন বন্যায় দিশেহারা অসহায় কৃষকেরা। ঢাকার ধামরাইয়েও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলসহ বেশিরভাগ ইউনিয়ন। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। কৃষকের মুখে ভেসে উঠেছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
ধামরাইয়ের বংশাই ও গাজিখালি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তাঘাট ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে পানি। তবে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। অনেকে আশ্রয় নিয়েছে রাস্তায়, কেউবা স্কুলের ভবনে। পানির নিচে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল।
শুক্রবার (৭ আগস্ট) বিকেলে ধামরাই ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কুশুরা, বাইশকান্দা, যাদবপুর, রোয়াইল, কুল্লা, বালিয়া, আমতা, গাঙ্গুটিয়া, নান্নার, সোমভাগ, ভাড়ারিয়া, চৌহাট, সানোড়া, ধামরাই সদর, পৌরসভাসহ সুতিপাড়া এলাকার ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে আউশ ধান, বীজতলা, রোপা আমন, বোনা আমন, সবজি পাট কলা ও লেবুর বাগান। এতে করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৬ হাজার ৩১ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করেছেন ধামরাইয়ের কৃষকরা। এর মধ্যে ২ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৮ হাজারেরও বেশি কৃষক।
ধামরাইয়ে আউশ ধানের ৮০২ হেক্টর জমির মধ্যে পানির নিচে তলিয়ে গেছে ৬০৩ হেক্টর জমি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৮ হাজার চাষি। ৪২৫ হেক্টর জমি বীজতলার মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে ৩৭৫ হেক্টর বীজতলা। এতে প্রায় ৬৫০ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রোপা আমন ১০০ হেক্টর জমির মধ্যে ১০০ হেক্টর জমিই পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৩০০ চাষি। সবজি ৮৮১ গেক্টর জমির মধ্যে ৮২০ হেক্টর, পাট ৬০ হেক্টর জমির মধ্যে ৫০ হেক্টর, বোনা আমন ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৫৫০ হেক্টর, কলা ৩৮ হেক্টর জমির মধ্যে ২৫ হেক্টর ও লেবু ৭৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ৪৫০ হেক্টর আবাদি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার চাষি।
ধামরাইয়ের কুশুরা এলাকায় ১৫০ বিঘা জমিতে কন্ট্রাক্টে লেবুর বাগান করেছেন আবুল হোসেন। চলমান বন্যায় তার প্রায় ৭০ বিঘা জমির লেবু গাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি আমার বাগান পরিচর্যার খরচই এখনও তুলতে পারি নাই। এ এই দুই মাস অনুমান ছিল দুই মাসের মধ্যেই খরচ উঠে আসবে। কিন্তু বন্যার পানিতে বাগান তলিয়ে যাওয়ায় মনে হয় খরচ তুলতে পারবো না। এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। আমরা কৃষক মানুষ, এত ক্ষতি কিভাবে পূরণ করবো। নিজের জমি না থাকায় কট্রাক্ট নিয়ে চাষ করায় ব্যাংকও আমাদের ঋণ দেয় না। কোন অনুদান না পেলে আমরা নিস্ব হয়ে যাবো।
কলা চাষি কুতুবউদ্দিন বলেন, আমি কলা চাষ করে সন্তানদের ভরণপোষণ দিতাম অতি কষ্টে। প্রায় ৭ বিঘা জমির কলা গাছ আমার শেষ হয়েছে। আমার তো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। আমি আমার জীবনে এই এলাকায় এতো পানি দেখি নি। বন্যার পানি আমার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে গেলো। আমরা বেশির ভাগই জমি লিজ নিয়ে চাষ করি। লিজের বাকি টাকাটাও এখন দিতে পারবো না।
সবজি চাষি আলী জানান, আমি সবজি চাষ করে আমার ৩ সন্তানকে লেখা পড়া করাই। তাদের কলেজে ফি, বেসরকারি ভার্সিটির সেমিস্টার ফি এখন কিভাবে পরিশোধ করবো। খুব চিন্তায় আছি। সব সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট কিছুই নেই।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ধামরাইয়ে প্রায় ৮ ধরনের ফসল নষ্ট হয়েছে। আউশ ধানের বেশিরভাগ ফসলই নষ্ট হয়ে গেছে, বীজতলার মধ্যে সমস্ত বীজতলা নষ্ট হয়েছে। আমাদের ধানের বীজতলার জন্য ১ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছি। সেখানে বীজ উৎপাদন করে আমরা কৃষকের মাঝে সুষ্ঠু বন্টন করে দেবো। আর লেবু চাষিসহ সকল চাষিদের আমরা বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে তাদের পাশে থেকে আমরা সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে যাবো।