রাজধানীতে আবারও সক্রিয় হচ্ছে কিশোর গ্যাং

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 21:17:16

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরায় ২০১৭ সালে আদনান কবির নামে এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করে অন্য কয়েকজন কিশোর। ওই ঘটনার তদন্তের একটা অংশে উঠে আসে, স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের নানা নামে ‘গ্যাং' বা ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ' থাকার বিষয়টি। সেসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল এই কিশোর গ্যাংগুলোকে।

সম্প্রতি (৩১ আগস্ট) দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মেহেদী হাসান (১৬) নিহতের পর, পুলিশ বলছে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে অভিজাত এলাকার কিশোরদের গ্যাং গ্রুপগুলো।

কিশোর অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা,পারিবারিক অনুশাসনহীনতা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অংশগ্রহণহীনতা ও ইন্টারনেটের অপব্যবহারের ফলে এমন অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সর্বশেষ ঘটনায় পুলিশ জানায়, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের জেরে দক্ষিণখানে খুন হয় কিশোর মেহেদী হাসান। দক্ষিণখানে দীর্ঘদিন ধরে আরাফাত ও সামসু গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। তারা এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তারা চাঁদাবাজি, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

দক্ষিণখান থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শফিকুল গনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, নিহত মেহেদীর মা শাহিনুর বেগম বাদী হয়ে ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এলাকার প্রভাব বিস্তার এবং সিনিয়র ও জুনিয়র দ্বন্দ্বে মেহেদীকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সিফাতসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে ২০১৭ সালে উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে খেলার মাঠে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে হত্যার পর কিশোর অপরাধের বিষয়টি সবার নজরে আসে। এ ঘটনায় সে সময় আদনানের সমবয়সী ন’জন কিশোরকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়৷

পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে, উত্তরা এলাকায় কিশোরদের অন্তত পাঁচটি কথিত গ্যাং আছে৷ আদনান নিজেও ছিলো- ‘নাইন স্টার' গ্রুপের সদস্য৷ এছাড়াও অন্য গ্রুপ ছিল, বিগবস, ডিসকো বয়েজ উত্তরা, পাওয়ার বয়েস উত্তরা এবং নাইনএমএম বয়েজ উত্তরা৷

শুধু আদনানের এই ঘটনা নয়, গত এক-দুই বছরে- ধানমণ্ডি, তেজগাঁও এবং বাড্ডাসহ রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন মহল্লায় এমন গ্রুপের বেশকিছু তথ্য আছে পুলিশের কাছে। বয়সের তুলনায় বড় বড় অপরাধ করছে এই কিশোররা।

হঠাৎ কিশোর অপরাধ বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগের শিক্ষক শেখ তউহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অভিবাবকদের নিয়ন্ত্রণহীনতা, অর্থের সহজলভ্যতা, ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের অবাধ সুবিধা ইত্যাদি কিশোর অপরাধ বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নুর খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এ ধরণের অপরাধ বাড়ছে। সমাজের প্রতিটা স্তরে নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় হচ্ছে। সমাজের সর্বস্তরে অপরাধ বাড়ছে তাই কিশোর অপরাধও বাড়ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, নতুন করে আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে কিশোর গ্যাংগুলো। তারা অধিকাংশই অভিজাত পরিবারের সন্তান।

কিশোর গ্যাং গ্রুপের এমন অপতৎপরতারোধে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। এই গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, এরপর এমন ঘটনা ঘটলে- কিশোরদের বাবা-মাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর