‘কয়লা নিয়ে কাজ করিনি এ বক্তব্য সঠিক নয়’

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 11:12:40

‘কয়লা নিয়ে কাজ করিনি এ বক্তব্য সঠিক নয়, আমরা স্ট্যাডি করেছি। কয়লা আমি বাইরে থেকেও আনতে পারব। কিন্তু জমি বাইরে থেকে আমদানি করতে পারব না, এগুলো ভাবতে হবে।’

রোববার (৯ আগস্ট) দুপুরে ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় বক্তাদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, ‘আফটার মাইনিং কী হবে সেগুলো ভাবতে হবে। এগুলো বিশ্লেষণ করে এগিয়ে যেতে হবে। কয়লা তুললাম কি তুললাম না, এলএনজি আনলাম কি আনলামনা সেটি বড় বিষয় না। সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক বিষয়টি হচ্ছে সবচেয়ে বড়।’

তৌফিক ই ইলাহী বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে গ্যাস পাওয়া গেলেও ১০বছর অপেক্ষা করতে হবে। প্যারালাল পরিকল্পনা থাকতে হবে। জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতেই হবে। তাহলে আমরা কম গ্যাস দিয়ে বেশি লোককে দিতে পারব। প্রতিবেশী সবগুলো দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জাতির জনক সংক্ষিপ্ত সময়ে মেরিটাইম আইন করেছিলেন। সেই সময়ে অনেক দেশেই করেনি। একদিকে যেমন সমকালীন সমস্যা নিয়ে কাজ করেছিলেন, আবার ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কী প্রয়োজন হবে সেদিকেও সমান নজর দিয়েছিলেন।’

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন জাতির জনকের প্রদর্শিত পথে হাঁটছি কি না। আপনারা জানেন বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ খাতে। আমরা ২৭০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছি। কোভিড-১৯ অবস্থায় রপ্তানি কমে যায়নি। গ্যাসের চাহিদা প্রথম দিকে কিছুটা কমলে এখন কিন্তু বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রিসোর্স প্লানিংয়ের মধ্যেই রয়েছি। জ্বালানি ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদী, কিছু মধ্যমেয়াদী, কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদী লংটার্ম পরিকল্পনা নিয়েছি। একটি বাস্কেটে রেখে পরিকল্পনা নেওয়া আমাদের মতো দেশের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত সময়ের সরকারের কিছু ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে এখনও। মিয়ানমার থেকে ভারত গ্যাস নিবে সেই সময়ে বিএনপি জামাত জোট সরকার পাকিস্তানের পরামর্শে পাইপলাইন করতে দেয়নি। আমরা সেখান থেকে গ্যাস পেতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলপিজিকে ৭৫ শতাংশ ঘরে পৌঁছে দিতে পেরেছি। দুই-তিন বছরের মধ্যে ভালো পরিস্থিতির দিকে যেতে পারবো। সেটি বিদ্যুতের ক্ষেত্রে, জ্বালানির ক্ষেত্রে। সকলকে আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিব। সেদিকে আমরা এগিয়ে যাব।’

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘নিজস্ব উৎসের দিকে বেশি জোর দিতে হবে।’

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রীকাইল ইস্ট থেকে গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ করতে পারব। বাপেক্সকে অনেক কাজে লাগিয়েছি। আরও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। যেকোনো সময়ের চেয়ে বাপেক্স এখন বেশি সক্ষম। শরীয়তপুরে বাপেক্স একটি অনুসন্ধান কাজ শুরু করবে। এখানেও ভোলার মতো সম্ভাবনা রয়েছে।’

প্যানেল আলোচক ছিলেন ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার, এনার্জি এন্ড পাওয়ার পত্রিকার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবিএম আবদুল ফাত্তাহ্ বিপিসির চেয়ারম্যান সামছুর রহমান প্রমুখ।

১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট ৫টি গ্যাস ক্ষেত্র (তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাশটিলা) বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। যার উপর ভিত্তি করেই এখন দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত।

যে কারণে ৯ আগস্টকে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। ঐতিহাসিক ওই ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১০ সালে ৯ আগস্টকে ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হচ্ছে, ”মুজিববর্ষের অঙ্গীকার সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানির প্রাধিকার”।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবিএম আবদুল ফাত্তাহ্ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কেনা ওই পাঁচটি গ্যাস ফিল্ড থেকে ৪৮ বছর গ্যাস উত্তোলনের পরে এখনও ৫.৮২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে। মজুদ গ্যাসের আর্থিক মূল্যমান ১৬০ কোটি টাকা।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর