বাঙালি নারীর প্রথাগত ঘরানাটা একটু একটু করে ভেঙে দিচ্ছিল রেশমা নাহার রত্না। বিশ্বের অজেয় পাহাড়গুলো জয় করার পণ ছিল তার। পণ ছিল বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে সবগুলো মহাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়ায় লালসবুজের পতাকা উড়িয়ে দেয়ার। এই স্বপ্ন চোখে নিয়ে কঠোর অনুশীলনে রত ছিলেন রেশমা নাহার রত্না।
স্বপ্ন ছিল গিনেসের রেকর্ডবুকে নাম লেখানোর, বাঙালি নারীর সাফল্যের মুকুটে নতুন একটি পালক বসানোর। তার সেই পণ, সেই দুর্বার গতি থেমে গেছে আচমকাই। গত ৭ আগস্ট সকাল ৯টায় রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যানে লেকরোডে সাইক্লিং করার সময় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় প্রাণ দিতে হয় তাকে।
প্রতিদিনই দীর্ঘতর হচ্ছে সড়কে নিহতের তালিকা। গত ৮ আগস্টও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৭ জন। নৌ-রেল ও সড়কপথে প্রতিবছর এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ, আহত-পঙ্গুত্ব বরণে বাধ্য হচ্ছেন তারও কয়েক গুণ বেশি। দুর্ঘটনার নামে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আর কত?
এসব প্রশ্নের সমাধান খোঁজার পাশাপাশি অবিলম্বে রেশমা নাহার রত্না হত্যার জন্য দায়ী ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি নিয়ে গত রোববার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), গ্রিনফোর্স, ডবিøউবিবি ট্রাস্ট, বানিপা, বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন, ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন, সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ গারো আদিবাসী লীগ, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন ও নোঙরসহ সমমনা সংগঠনগুলো।
পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও পবা সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এমএ কাশেম, ঢাবির শিক্ষক ও গবেষক কাজী সামির শীষ, পবা সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন সুমন, পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার, বানিপা সভাপতি প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুববুস, নোঙর সভাপতি শামস সুমন, বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক অপার আহমেদ, গবেষক খন্দকার স্বনন শাহরিয়ার, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন সদস্য সচিব শাকিল রহমান, নাসফ সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, জাতীয় ক্রীড়াবিদ সুলতানা মৌসুমী, সচেতন নগরবাসীর সভাপতি জি এম রোস্তম খান ও সাইক্লিস্ট কাজী খোকন।, বিশিষ্ট উপস্থাপিকা এবং আবৃত্তিকার শারমিন নাহার লাকি ।
এসব নৈরাজ্য ও অব্যবস্থার অবসানে অবস্থান কর্মসূচিতে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- ১. রেশমা নাহার রত্না হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ২. আশু ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ৩. রাজপথে সাইকেলের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা ৪. আইন অনুসারে পথচারীর অগ্রাধিকার নীতির ব্যাপক বাস্তবায়ন ৫. গভীর রাতে ও ভোররাতে বেপরোয়া গতির গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা ৬. সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পর্যাপ্ত বড় বড় বাস চালু করা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়া হয় প্রাইভেট কারের সুবিধার দিকে নজর রেখে। অথচ প্রয়োজন ছিল ভালো গণপরিবহন ব্যবস্থা, যাত্রীবান্ধব বড় বড় বাস। পর্যাপ্ত বাসের অভাবে এবং পরিবহনে মাফিয়া চক্রের কারণে দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই কমছে না। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়নে শৈথিল্যের কারণে থামছে না বেপরোয়া গাড়ি চলাচল। পবা ও সমমনা সংগঠনগুলো জনগণকে সাইকেল চালাতে উৎসাহিত করার সাথে সাথে সাইকেলের জন্য আলাদা লেনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সাইকেলের ব্যবহার ইদানীং বৃদ্ধি পেলেও সাইকেলের জন্য নগরে আলাদা কোনো লেন বা প্রয়োজনীয় সুবিধা এখনো নাই। ফলে তেমনই একটি বেপরোয়া গাড়ি চালানোর মর্মান্তিক শিকার হতে হলো রত্নাকে।