কাপাসিয়া কলেজের অধ্যক্ষ, অফিস সহকারী ও পিয়ন বরখাস্ত

, জাতীয়

মাহমুদুল হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর  | 2023-08-31 18:37:31

নানা দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গাজীপুরের কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক (পিয়ন) সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।

গত ২৯ জুলাই কলেজের পরিচালনা পর্ষদের ২৩৩ নম্বর সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী বিভিন্নভাবে তাদের দুর্নীতির শিকার হয়েছে।

বরখাস্তরা হলেন- সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহা. ওয়াজিদুর রহমান খান, অফিস সহকারী স্বপন কুমার পাল ও অফিস সহায়ক (পিয়ন) মো. ফরিদ উদ্দিন।

পরিচালনা পর্ষদের ওই সিদ্ধান্তের পর গত ৬ আগস্ট এই তিনজনকে বরখাস্তের চিঠি দেওয়া হয়। যাদের মধ্যে অফিস সহকারী স্বপন কুমার পাল ও অফিস সহায়ক (পিয়ন) মো. ফরিদ উদ্দিনকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জবাবদিহি করতে বলা হয়েছে। যদিও স্বপন কুমার পাল এবার নিয়ে একই ধরনের অভিযোগে তিনবার সাময়িক বরখাস্ত হলেন।

এর আগে তাদের বিরুদ্ধে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি, ফরম পূরণে অনিয়ম, সেন্টার ফি’র টাকা হেরফের, টিসি, মার্কশিট ও প্রবেশপত্র প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন খাতের ফি ব্যাংকে জমা না দিয়ে নগদে আদায়সহ বিভিন্ন খাতের অর্থ নানা কৌশলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।

পরে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হস্তক্ষেপে তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হয়। তদন্ত দল দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে ইউএনও মোসা. ইসমত আরার কাছে লিখিত প্রতিবেদন জমা দেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির কাছে সুপারিশ করেন ইউএনও।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস. এম তরিকুল ইসলাম পদাধিকার বলে কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। এ প্রসঙ্গে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসারে তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করা আছে। কমিটিতে সরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষসহ ৫ জন সদস্য রয়েছেন। ওই কমিটি বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়াও অভিযুক্তদের শোকজ করবে, জবাব নিবে। সবশেষে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পরিচালনা পর্ষদের কাছে জমা দিবে। এরপর তারা চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসারে শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে তাদের বরখাস্ত করা হবে।

অফিস সহকারী স্বপন কুমার পাল আগেও তিনবার সাময়িক বরখাস্ত হয়ে চাকরিতে বহাল থাকছেন কিভাবে প্রশ্নে ডিসি বলেন, এবার একেবারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কতজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কতো করে টাকা নিয়েছে, কলেজ ফান্ডে কত জমা হয়েছে এই অভিযোগগুলো একেবারে সুনির্দিষ্ট। প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে তাদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেক শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেও পরীক্ষা দিতে পারেনি। প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর অনেকে টেস্ট পরীক্ষা না দিয়ে, সব বিষয়ে ফেল করেও অভিযুক্তদের জালিয়াতির মাধ্যমে ফরম পূরণের সুযোগ পেয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহা. ওয়াজিদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে গত ১৮ জানুয়ারি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এরশাদ হোসেন আজাদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় তার সময় কয়েক ধাপ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে কলেজটিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ৪২ জন। আর নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৪-১৫ জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর