আসামি একজন, অর্থের বিনিময়ে সাজা খাটছেন আরেকজন!

, জাতীয়

আবদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-08-24 01:57:35

কুমিল্লায় মাদক কারবারি আনোয়ার হোসেন নামের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির হয়ে সাজা খাটছেন আবু হানিফ নামে আরেকজন ব্যক্তি। সোমবার (১০ আগস্ট) আদালতে জামিন আবেদন করতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানতে পারেন আসামি আনোয়ার হোসেনের পরিবর্তে এতোদিন জেল খেটেছেন ভাড়াটে আসামি। বিষয়টি জানার পর আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লার আদালত পাড়ায় মঙ্গলবারও (১১ আগস্ট) ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আলোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন এ যেন আয়নাবাজি সিনেমার মতো বাস্তবের আরেক 'আয়নাবাজি'।

সূত্র জানায়, কাগজপত্রে গত জুলাই মাসে কুমিল্লা কোতয়ালি থানার একটি মাদকের মামলায় জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গঙ্গানগর গ্রামের আনোয়ার হোসেন। সে সময় আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি ও আসামি আনোয়ার । তার বিরুদ্ধে অন্তত ৮টি মাদক মামলা রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ারের পিতার নাম মৃত তৈয়ব আলী।

জানা গেছে, আনোয়ার হোসেনের পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে জেল খাটছেন আবু হানিফ। তার বাড়ি জেলার বরুড়া উপজেলায়। তিনি উপজেলার বড় হাঙ্গিনী গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে।

মামলার বাদী জেলা ডিবি পুলিশের তৎকালীন এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার জানান, ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই মাদক ব্যবসায়ী হেলাল ওরফে মুরগি হেলালকে ২ কেজি গাঁজাসহ আটক করি। পরে আটক আসামি হেলাল জানায়, তার সাথে আরেক মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ার ছিলো। এ বিষয়ে তখন কোতয়ালি থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের করি। ওই মামলায় পলাতক আসামি ছিলো আনোয়ার হোসেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম।

মামলার এজহার ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গঙ্গানগর এলাকার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত আসামি আনোয়ার হোসেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৮টি মাদক মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালের একটি মাদকের মামলায় গত ৮ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আসামি আনোয়ার হোসেন। গতকাল সোমবার সেই মামলার জামিন চাইতে গেলে জানা যায়, টাকার বিনিময়ে আসামি আনোয়ার হোসেনের পরিবর্তে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেল খাটছে বরুড়ার আবু হানিফ। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সরকার পক্ষের আইনজীবী পিপি জহিরুল ইসলাম সেলিম আদালতকে জানান। এছাড়া বিষয়টি জানার পর আসামি পক্ষের আইনজীবী মামলা পরিচালনা থেকেও অব্যাহতি নেন।

কুমিল্লা জেলা পিপি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম বলেন, গত কিছুদিন আগে সদর কোর্টে আত্মসমর্পণ করেন আসামি আনোয়ার হোসেন। তখন আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। গতকাল সোমবার জেলা ও সেশন জজ আদালতে তার জামিনের জন্য আবেদন করা হয়। তখন আমি বিষয়টি জানতে পারি। পরে বিজ্ঞ আদালতকে বলি এই আসামি আনোয়ার হোসেন নয়, তার পরিবর্তে অন্য একজন। তখন আদালত মামলাটি আবারও সদর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর