পুরোনো গতিপথে তিস্তা, বাড়ছে পানি ও ভাঙন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-26 01:13:27

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে ২৫ বছর পর পুরোনো গতিপথে ফিরেছে তিস্তা। এতে সাতটি গ্রামের হাজারো পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। ভাঙন তীব্র হওয়াতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সরে যাচ্ছেন অনেকেই। নদীর গতি পরিবর্তন হওয়ায় হুমকির মুখে রংপুর-লালমনিরহাট জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

তিস্তার অন্যান্য জায়গাতে পানি কমলেও সোমবার (১০ আগস্ট) রাত থেকে হঠাৎ করেই পানি বাড়তে দেখা গেছে গঙ্গাচড়ায়। এতে রংপুর থেকে কাকিনা-লালমনিরহাট সংযোগ সড়কটি তিস্তা নদীর পানির প্রবল চাপে ভাঙতে শুরু করেছে। রংপুর থেকে কাকিনা-লালমনিরহাট যাতায়াতের জোরা ব্রিজ ও বুড়িমারী স্থলবন্দর সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ধসে গেছে ব্রিজের ব্লক পিচিং।

জানা গেছে, চলতি বন্যায় শংকরদহ গ্রামের একটি রাস্তা ভেঙে পঁচিশ বছর পর পুরোনো গতিপথে ফিরেছে তিস্তা। এতে পশ্চিম ইচলি, পূর্ব ইচলি, কাশিয়াবাড়ি, শংকরদহসহ সাতটি গ্রামের হাজারো মানুষের বসত ভিটা, ফসলি ক্ষেত বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। অথচ কিছুদিন আগে যেখানে ছিলো মানুষের বসবাস। এখন সেখানে অথৈ জল।

পুরোনো গতিপথে তিস্তা

এবারের কয়েক দফার ভাঙনে শংকরদহ গ্রামটি বিলিন হয়ে গেছে। হাফেজিয়া মাদরাসা, শংকরদহচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিনবিনা পাকা রাস্তাঘাট বিলিন হয়েছে নদীগর্ভে। প্রায় ৬ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও গাছগাছালি বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে। এখন বিলিনের পথে পূর্ব ও পশ্চিম ইচলি গ্রাম দুটি। চরের হাজারো আশ্রয়হীন মানুষের মনে আতঙ্ক জাগিয়েছে নদীর গতিপথে নতুন করে পানি বাড়ায়।

স্থানীয়দের দাবি, পুরোনো গতিপথে পানির তীব্র স্রোতে হুমকিতে পড়েছে সংযোগ ব্রিজটিসহ বুড়িমারী সড়ক। ভাঙন রোধ করা না গেলে যে কোনো সময় ব্রিজ ও সড়ক ভেঙে যাবে। এতে করে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যাবে। রক্ষা করা যাবে না গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সড়ক সেতুটিও।

এরজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা কাজ আর বেড়ি বাঁধ নির্মাণ না করাকে দুষছেন স্থানীয়রা। শেখ হাসিনা সড়ক সেতু হতে শংকরদহ ও ইচলি চর হয়ে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা গেলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না বলেও তাদের দাবি।

চরের হাজারো আশ্রয়হীন মানুষের মনে আতঙ্ক জাগিয়েছে নদীর গতিপথে

এদিকে মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুরে তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণসহ টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে এসকের বাজারে বৃষ্টিতে ভিজে মানববন্ধন করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। এতে বক্তব্য রাখেন- কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাহের হোসেন তাহু, লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল হোসেন আশরাফী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী, ইউপি সদস্য আব্দুল মোন্নাফ প্রমুখ।

বক্তারা ভাঙন রোধে অবিলম্বে ২০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলানোসহ বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান। একই সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা কাজের আড়ালে চলতে থাকা অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে সরকার প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অন্যদিকে নদী ভাঙন রোধসহ রাস্তা ও ব্রিজ রক্ষার্থে গঙ্গাচড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে বস্তায় বালু ভরে ভাঙন কবলিত এলাকায় ফেলা হচ্ছে বলে জানান উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইব্রাহীম খলিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর