‘বঙ্গবন্ধু বিনা অস্ত্রে নিয়ন্ত্রণ নিলেন’

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 16:20:16

শত্রুপক্ষ অস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ ঘোষণা দিয়ে বিনা অস্ত্রে নিয়ন্ত্রণ নিলেন। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম।

শনিবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক ধরনের শক্তি। আমি অরাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলাম না, আমি ছিলাম মহকুমার প্রশাসক (এসডিও)। সেদিন চুরি করে ৭ মার্চের ভাসন শুনতে এসেছিলাম। ১৫ মিনিটের সেই বক্তৃতায় সব ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই বক্তৃতায় এক ধরনের শক্তি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘১৭ এপ্রিল যখন শপথ গ্রহণ করল প্রবাসী সরকার। ঘোষণাপত্র যখন পাঠ করা হলো, সেদিন সেটি কিন্তু সংবিধান ছিল। সেখানে বলা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু। প্রবাসী নয়, অস্থায়ী নয়, এটি ছিল স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রথম সরকার। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একটি সমর্থক শব্দ। এটাকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। অনেকে বলবেন বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের সময় ছিলেন না। কিন্তু তিনি না থেকেও বেশি ছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুব সিম্পল একটি গোল (লক্ষ্য) দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সেটি হচ্ছে দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানো। সমাজের ফাইনাল হ্যাপিনেস ইনডেক্স হচ্ছে হাসি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর বিরোধীরা ক্ষমতায় ছিল। তারা সব সাক্ষী প্রমাণ ধ্বংস করেছেন। ‍পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সেনা আত্মসমর্থনের জায়গাকে যাতে স্মরণ করতে না পারি, তার জন্য সেখানে শিশুপার্ক করা হয়েছে, ভাবতে পারেন? চক্রান্ত কারা করেছিল, কারা সুবিধাভোগী ছিলেন, তা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি।’

বিদ্যুৎ বিভাগের ভার্চুয়াল সভা চলছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পঁচাত্তরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। ওই সময় আমরা কুচকাওয়াজের পর জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিতাম। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অধ্যক্ষ পরিবর্তন হয়ে গেল। সেনা অফিসার অধ্যক্ষ হয়ে এলেন। তিনি পরের সপ্তাহে ঘোষণা দিলেন জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলা যাবে না। সেদিন কিন্তু ছাত্ররা সেই নির্দেশনা মানেনি।’

তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর ৩ মাস আমরা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে থেকেছি। সেই সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরার জন্য সেনা অফিসার নিয়োগ দেয়া হলো। আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো। আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে চাইলেন, কিন্তু অধ্যক্ষ না করলেন।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন কাজ করার। ওই সময়ে তিনি কী না করার চেষ্টা করেছেন। ভবিষ্যতে যা যা করার দরকার সব নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সারা বাংলাদেশের আজকের যে গতি, তার সেই ৫ গ্যাস ফিল্ড কেনার কারণে। বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়ে গেছেন, আমরা পারি, আমরা করতে পারব। মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যকে ঢাকা যায় না।’

২০০২ সালের কথা স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘সেদিন ১৫ আগস্ট ঢাকা শহরে কোনো ব্যানার ছিল না। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। প্রতিবার শেখ হাসিনা আসেন, দেশের উন্নতি হয়। আর অন্যরা আসেন, দেশ পিছিয়ে যায়। আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার এটাই উত্তম সময়।’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুকে কতোটা আত্মস্থ করেছি সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন, সমগ্র জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন কোনো সামরিক শক্তি তাকে মোকাবিলা করতে পারে না। যারা এক সময় নানা ব্যঙ্গ করত তারাই এখন সবচেয়ে বড় প্রেমিক সেজেছে, তাদের বিষয়ে সচেতন থাকার সময় এসেছে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বক্তারা।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান বলেন, ‘যাকে পাকিস্তানিরা হত্যা করতে সাহস পায়নি, সেই বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশি কেউ হত্যা করতে পারে, এটা পঁচাত্তর সালে অনেকে বিশ্বাস করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু এক মহাকাব্যের নায়ক। বাংলাদেশ যতোদিন থাকবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তার আলোচনা চলতেই থাকবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘১৪ আগস্ট অপরাহ্নে আমরা যখন বাসায় ফিরছি, তখন সেই আশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি যে পরদিন বঙ্গবন্ধু আসবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় যখনই সংকটে পড়েছে, তখনই বঙ্গবন্ধু হাজির হয়েছেন। যুদ্ধের পর শিক্ষার্থীরা নানা দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। কিছু ছাত্রনেতা ভিসির কক্ষে তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করেন। বঙ্গবন্ধু ভিসি ঘেরাওয়ের খবর পেলেন, তখন সোজা রেজিস্ট্রার ভবনে চলে এলেন বঙ্গবন্ধু। এসেই তালা খুলে দিতে বললেন। এতে বুঝা যায়, তিনি শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কী মর্যাদা দিয়েছেন।’

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন অতিরিক্ত সচিব একেএম হুমায়ুন কবীর, মাকছুদা খাতুন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সিইও এএম খোরশেদুল আলম, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জে (অব.) মঈন উদ্দিন, ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) এমডি কাওসার আমির আলী, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এমডি বিকাশ দেওয়ান, নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) এমডি জাকিউল ইসলাম, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন কোম্পানি ও দপ্তর-পরিদপ্তর ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (পবিস) পদস্থ কর্মকর্তারা এই ভার্চুয়াল সেমিনারে অংশ নেন।

ভার্চুয়াল সভা শেষে ১৫ আগস্টে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কোরআন তেলাওয়াত ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর